আনোভা – হুমায়ূন আহমেদ

আনোভা – হুমায়ূন আহমেদ

স্যার, আমার নাম মকবুল। আমেরিকানরা মকবুল বলতে পারে না। তারা ডাকে ম্যাক। কেউ কেউ ডাকে ম্যাকবুল। শুরুর দিকে আপত্তি করতাম। বলতাম, ম্যাকবুলের চেয়ে মকবুল উচ্চারণ অনেক সহজ। খামোকা কঠিন নামে কেন ডাক? শেষের দিকে এইসব বলা ছেড়ে দিয়েছি। আমেরিকানরা নিজে যা বুঝে তাই। যুক্তির ধার ধারে না।

কাগজপত্র ছাড়া আমি আমেরিকায় তেরো বছর কাটিয়ে পশুর মতো স্বভাবের হয়ে গিয়েছিলাম। পশু যেমন মানুষকে দেখেই আতঙ্কে অস্থির হয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে, আমিও তাই করতাম। পুলিশ দেখলে বুকে এবং তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতো। ব্যথা মাঝে মাঝে এমন তীব্র হতো যে, বাথরুমে ঢুকে বমি করতাম।

রাতে থাকতাম কিছু মেক্সিকানদের সঙ্গে। তারা ড্রাগ নিত, তবে আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করত। তাদের জন্যে প্রতিরাতেই খিচুড়ি রাধতাম। তারা আমার খিচুড়ি ড্রাগস-এর মতোই আগ্রহ করে খেত। খিচুড়িকে তারা বলত কিচলি।

খিচুড়ি রান্না আমি দেশ থেকে শিখে আসি নি। কেউ আমাকে শেখায়ও নি। সম্পূর্ণই আমার নিজের আবিষ্কার। হাতের কাছে যা পেতাম, সবই বড় একটা হাঁড়িতে চড়িয়ে জ্বাল দিতে থাকতাম। প্রচুর ঝাল দিতাম। রান্না শেষ হবার পর ডাল বাগাড়ের মতো বাটারে বাগার দিতাম। খিচুড়ি খাবার সময় মেক্সিকান বন্ধুরা বেশির ভাগ সময় ঝালের কারণে হাঁ করে থাকত। তারপরেও নিজেদের মধ্যে মেক্সিকান ভাষায় বলাবলি করত, কিচলি জগতের শ্রেষ্ঠ খাবার।

আমি আমার এই ম্যাক্সিকান বন্ধুদের কারণেই গ্রিনকার্ড পাই। তাদের একজন আমাকে গাড়ি চালানো শেখায় এবং খোদ নিউইয়র্ক শহরে আমি ক্যাব চালাতে শুরু করি। সবই সম্ভব হয় খিচুড়ি নামক অখাদ্য এক রান্নার কারণে।

আমি ক্যাব চালাতাম রাতে। দিনে ঘুমাতাম। রাতে উলার বেশি পেতাম। ট্রাফিকও থাকত কম। তবে রাতে ক্যাব চালানোয় সমস্যাও ছিল। অনেক দুষ্টলোক যাত্রী সেজে ক্যাবে উঠত। তারপর পিস্তল দেখিয়ে টাকাপয়সা নিয়ে নিত। কয়েকজন ক্যাব চালক সন্ত্রাসীদের হাতে গুলি খেয়ে মারাও গেছে। ক্যাব। পরিচালনা সংস্থাগুলি নানান নিয়মাবলি ক্যাব চালকদের জন্যে তৈরি করেছিলেন। যাতে তাদের জানমালের ক্ষতি না হয়। যেমন–

১. ওয়াকিটকি সর্বক্ষণ খোলা রাখবে।

২. কেউ পিস্তল ধরলে তার সঙ্গে আমেন্টে যাবে না। সে যা চায় সবই দিয়ে দিবে।

৩. সন্দেহজনক কাউকে গাড়িতে তুলবে না। ভদ্রভাবে তাকে নিষেধ করবে। যেমন–গাড়ির ইজেকশন ফুয়েল আমাকে ট্রাবল দিচ্ছে, এখন তোমাকে নিতে পারছি না, সরি।

এইসব নিয়মকানুন আমি মোটেই মানতাম না। সবাইকে গাড়িতে তুলতাম। আমার তখন প্রচুর ডলার দরকার। অনেকদিন দেশে যাই না। দেশে যাব। সম্ভব হলে বিয়ে করব। মা চিঠিতে জানিয়েছেন তিনি মেয়ে দেখে রেখেছেন। মেয়ে ইন্টার পাস। গাত্রবর্ণ অত্যন্ত পরিষ্কার। নাম কমলা।

অতি লোভে একবার মহাবিপদে পড়লাম। স্যার, আপনাকে সেই গল্পটাই বলব। আপনি লেখক মানুষ, অনেকের কাছে অনেক গল্প শুনেছেন–আমি যে গল্প বলব সেটা শুনেন নাই। এখন স্যার আমাকে যদি তিন মিনিট সময় দেন, তাহলে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট খাব। আপনার সামনে সিগারেট খাওয়ার মতে বেয়াদবিটা করব না। এই গল্পটা করার সময় আমার খুব টেনশন হয়। তখন সিগারেট না খেয়ে পারি না।

ডিসেম্বর মাসের শেষ। কয়েক বছর পর সেবারই খুব বরফ পড়েছে। ক্রিসমাসে বরফ ছিল না, হোয়াইট ক্রিসমাস হয় নি। ছাব্বিশ তারিখ থেকে শুরু হলো তুষারপাত। সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। সেই দেশে ঝড়ো হাওয়াকে বলে ব্লিজার্ড। রিজার্ডের সময় অফিস-আদালত ছুটি হয়ে যায়। জমিয়ে সবাই আড্ডা দেয়, পোকার খেলে, বিয়ার খায়। ধনী দেশ তো! তারা কষ্টটাকেও আনন্দ বানিয়ে ফেলে।

আমি ইয়েলো ক্যাব নিয়ে ঘুরি। অতিরিক্ত ভাড়া পাওয়া যায়। আমার কাছে ব্লিজার্ভ বড় ব্যাপার না। ডলার জমানো বড় ব্যাপার।

একজন লং রুটের যাত্রী পেলাম। সে যাবে নিউজার্সি। তার নাকি বিশেষ প্রয়োজন। এক্ষুনি যেতে হবে। সে বলল, ব্লিজার্ডের রাতে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি। আমি ভালো টিপস দেব।

আমি সাহেবকে নিয়ে গেলাম। ভালো টিপস পেলাম। ভাড়ার ওপর একশ ডলার। ফেরার পথে পড়লাম বিপদে। হুলস্থূল ব্রিজর্ডি শুরু হলো। এমন তুষারপাত আমি জন্মে দেখি নাই। যেন একসঙ্গে কয়েক লক্ষ বস্তা শিমুল তুলা কেউ আকাশ থেকে ছেড়ে দিচ্ছে। গাড়ি নিয়ে আগানোই মুশকিল। রাস্তার বরফ জমে কাচ হয়ে গেছে। গাড়ি সমানে স্কিড করছে। আমি সাবধানে এগুচ্ছি। হাইওয়েতে বড় বড় ট্রাক ছাড়া কোনো গাড়ি নেই। রাত তেমন হয় নি। দশটা, কিন্তু মনে হচ্ছে নিশুতি

হাইবিম দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি যাতে অনেকদূর দেখা যায়। হাইবিমে কাজ হচ্ছে না। দশ গজ সামনেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। গাড়ির ফগ লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছি, তাতেও উনিশ-বিশ হচ্ছে না। হঠাৎ দেখলাম একটা মেয়ে রাস্তার পাশে আঙুল তুলে দাঁড়িয়ে আছে, লিফট চায়।

ভয়াবহ দুর্যোগের রাতে এই মেয়েটা এখানে কেন? অনেক সময় হুকাররা এরকম দাঁড়ায়। লিফট চায়। পরে নানান ঝামেলা করে। খুনখারাবি পর্যন্ত হয়। স্যার, হুকার বুঝেছেন তো? ঐ দেশে বেশ্যা মেয়েদের বলে হুকার।

এই মেয়েটি হুকার না। তার সঙ্গে বাচ্চা একটা মেয়ে আছে। সম্ভবত তার মেয়ে। তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত। আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ঘটে যাবে। আমি গাড়ি থামালাম। দরজা খুলে দিলাম। তরুণী বাচ্চা একটা মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। অতি বিনয়ের সঙ্গে বলল, Sir thank you.

কালো ক্যাব ড্রাইভারকে কেউ স্যার ডাকে না। আমি তরুণীর দ্রতায় মুগ্ধ হলাম। মেয়েটি অতি রূপবতী। কোনো আমেরিকান মেয়েকে আমার কাছে রূপবতী লাগে না। মনে হয় ধবল কুষ্ঠের রোগী। এই মেয়েটির চুল সোনালি। দেখতে ছবির মতো। তার বাচ্চাটার চুলও সোনালি। বাচ্চাটা ঠান্ডায় কাহিল হয়ে আছে। সে মনে হয় ক্ষুধার্ত। ফিসফিস করে মাকে কী যেন বলল। তার মা লজ্জিত গলায় বলল, আমার মেয়েটা বার্গার খেতে চায়। তোমার পক্ষে কি সম্ভব হবে সামনের কোনো সার্ভিস স্টেশনে গাড়ি থামানো?

আমি বললাম, অবশ্যই সম্ভব।

আমার মেয়ের নাম আলোভা। ওর কাছে ফুড় কেনার মতো ডলার আছে।

স্যার কি বুঝতে পারছেন যে কথাবার্তা সব ইংরেজিতে হচ্ছে। আমি আপনাকে বলছি বাংলায়। কারণ হুবহু কথাগুলি মনে নাই।

অনেক ঝামেলা করে সার্ভিস স্টেশনে পৌছলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি আনোভা চুপচাপ বসে আছে। তার হাতে একশ ডলারের একটা নোট

আনোভার মা নেই। সে যাবে কোথায়? একটা মানুষ হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে না। দরজা। খুলে চলন্ত গাড়ি থেকে সে নেমে পড়েছে তাও হবে না। গাড়ির দরজা লক করা।

আমি হতভম্ব গলায় বললাম, তোমার মা কোথায়?

আনোভা বলল, Gone.

আমি বললাম, Gone মানে? কোথায় গন?

আনোভা কোনো জবাব দিল না। প্রশ্ন করলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তারপর চোখ নামিয়ে নেয়।

মেয়েটাকে বার্গার কিনে দিলাম। আইসক্রিম কিনে দিলাম। সে আগ্রহ করে বার্গার খাচ্ছে। তার মা হাওয়া হয়ে গেছে, এতে তাকে কোনোরকম চিন্তিত মনে হলো না।

সার্ভিস স্টেশন থেকেই আমি পুলিশকে টেলিফোন করে ঘটনা জানালাম। তবে মেয়েটার মা যে গাড়িতেই হাওয়া হয়ে গেছে এই তথ্য গোপন করলাম। এই কথা বললে পুলিশ আমাকে মানসিক রোগী ভাববে। আমাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে হবে। ক্যাব ড্রাইভিং-এর লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।

আমি বললাম, মা-মেয়েকে গাড়িতে তুলে একটা সার্ভিস স্টেশনে নিয়ে এসেছি। মেয়েটাকে রেস্টুরেন্টে ঢুকিয়ে অপেক্ষা করছি–দেখি মেয়ের মা আসছে না। তার খোঁজে গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি সে নেই।

মেয়েটা কত বড়?

পাঁচ-ছয় বছর হবে।

তাকে টেলিফোন দাও। আমি তার সঙ্গে কথা বলি।

ওপাশ থেকে পুলিশ কী বলল আমি শুনতে পাচ্ছি না। মেয়েটা কী বলছে শুনছি। প্রথম বলল, আনোভা।

তারপর বলল, ফোর এন্ড হাফ। মনে হয় বয়স বলল। তারপর বলল, Gone, তারপর শুধু No, কয়েকবার No বলার পর বলল, Ok.

সে টেলিফোন আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। পুলিশ আমার লাইসেন্স নাম্বার, ঠিকানা, সব হাবিজাবি নিয়ে বলল, তুমি নিউইয়র্কে মেয়েটাকে নিয়ে চলে এসো। সরাসরি আমাদের কাছে আসবে। পুলিশের একটা পেট্রোল কার আধাঘণ্টার মধ্যে সার্ভিস স্টেশনে পৌছে যাবে। সেই কার তোমাকে ফলো করবে। পেট্রোল কার না আসা পর্যন্ত তুমি মুভ করবে না।

স্যার, কী যে দুশ্চিন্তায় পড়লাম কলার না। আমার ধারণা হলো, পুলিশ আমাকে সন্দেহ করছে। হয়তো ভাববে মেয়েটার মাকে আমি খুন করে বরফের গাদায় ডেডবডি লুকিয়ে রেখেছি। ঐ দেশের পুলিশ যে কত খারাপ আপনি চিন্তাই করতে পারবেন না।

যাই হোক, পুলিশের গাড়ি মেয়েটাকে নিয়ে চলল। আমি যাচ্ছি পেছনে পেছনে। মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ছি।

প্রিসিংটে, স্যার ওদের দেশের থানাকে বলে প্রিসিংট, আমাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখল। মেয়েকে প্রচুর জিজ্ঞাসাবাদ করল।

তোমার বাবার নাম কী?

মার নাম কী?

কোথায় থাক?

কোন স্কুলে পড়?

প্রিয় বান্ধবীর নাম কী?

তোমার কি কোনো পেট আছে?

আনোভা কোনো প্রশ্নেরই জবাব দিল না! কঠিন মেয়ে। ছয় ঘণ্টা পর আমি ছাড়া পেলাম। মেয়েটাকে তারা রেখে দিল।

বাসায় ফিরে আমি দশ রাকাত নফল নামাজ পড়লাম বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার কারণে। যদিও জানি উদ্ধার এখনো পাই নি। যে-কোনো সময় পুলিশের। কাছ থেকে ডাক আসবে।

কুড়ি দিনের দিন ডাক পড়ল। গেলাম। পুলিশ অফিসার বললেন, আনোভার কোনো ট্রেস তারা বের করতে পারে নি। চেষ্টা পুরোদমে চলছে।

স্যার কি জানেন আমেরিকার মতো সভ্য দেশে হাজার হাজার শিশু প্রতিবছর হারিয়ে যায়? পুলিশ তার কোনো হদিস বের করতে পারে না।

আমি বললাম, স্যার মেয়েটা কোথায়? মেয়েটাকে একজন Foster Parent-এর কাছে দেয়া হয়েছে। আমি কি তার সঙ্গে দেখা করতে পারি?

সাইকিয়াট্রিস্ট অনুমতি দিলে দেখা করতে পারবে। একজন সাইকিয়াট্রিস্ট মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

আমি কি যেতে পারি?

পার। তুমি মেয়েটিকে দেখতে চাচ্ছ তা সাইকিয়াট্রিস্টকে জানানো হবে। সাইকিয়াট্রিস্টই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তার নাম পূল।

তিন মাস পার হয়ে গেল। কেউ যোগাযোেগ করল না। ধরেই নিলাম সাইকিয়াট্রিস্ট চান না আমি দেখা করি। আমেরিকা হচ্ছে স্যার মাথা খারাপের দেশ। সবচে বড় মাথা খারাপ সাইকিয়াট্রিস্ট হারামজাদাগুলার। খারাপ গালি ব্যবহার করেছি স্যার, কিছু মনে করবেন না।

তিন মাস পার হবার পর এক সোমবারে সাইকিয়াট্রিস্ট আমাকে টেলিফোন করলেন।

আমি বললাম, স্যার, মেয়েটি কেমন আছে?

সাইকিয়াট্রিস্ট বললেন, ভালো আছে। সে কথা খুব কম বলে এটাই সমস্যা, আর কোনো সমস্যা নেই।

তার মা-বাবার নাম এইসব কি বলেছে?

না। মনে হচ্ছে তার জীবনের শুরু হয়েছে তোমার টেক্সি ক্যাবে ওঠার পর। বড় ধরনের অ্যামনেশিয়া। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো কেটে যাবে।

আমি মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে পারি?

পার। সে চকলেট খুব পছন্দ করে। এক প্যাকেট চকলেট নিয়ে যেতে পার।

স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ।

তোমার সঙ্গে মেয়েটির কী কথা হয় সবই কিন্তু রিপোর্ট করবে।

আনোভা আমাকে দেখে যে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল তা-না। সামান্য হাসল। চকলেটের প্যাকেট হাতে নিল। মাথা নিচু করে বলল, থ্যাংক য়্যু।

আমি এক ঘণ্টা সেই বাড়িতে ছিলাম। আনোভার ফোস্টার মাদার আমাকে কফি খাওয়ালেন। নানান গল্প করলেন। সবই রাজনৈতিক। তিনি ডেমোক্রেট দলের একজন। তার গল্পের সবটাই রিপাবলিকানদের বদনাম।

যতক্ষণ আমি থাকলাম, ততক্ষণই আনোভা আমার পিঠে হেলান দিয়ে বসে রইল। আমি তার মুখ দেখতে পাচ্ছি না। শরীরের স্পর্শ পাচ্ছি।

একসময় ঘরে শুধু আমি আর আনোভা। বাড়িওয়ালি লনে ঘাস কাটতে গিয়েছে। ঘাস কাটা মেশিনের শব্দ হচ্ছে। আমি বললাম, আনোভা, যাই?

আনোভা পেছন থেকে একটা হাত এনে আমার সামনে ধরল। সেখানে একশ ডলারের একটা নোট। আনোভা স্পষ্ট গলায় বলল, মা তোমাকে এই ভলীরটা দিতে বলেছিল। তুমি নাও। না নিলে She will be sad.

আমি ডলার নিতে নিতে বললাম, তুমি কি তোমার মার বিষয়ে আর কিছু আমাকে বলবে?

আনোভা বলল, No.

আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললাম, আমার খুবই জানতে ইচ্ছা করে।

আনোভা আমাকে অবাক করে দিয়ে ফিসফিস করে পরিষ্কার গলায় বলল, আমার মার সঙ্গে তোমার আরো একবার দেখা হবে।

কোথায়? কখন?

আনোভা জবাব দিল না।

স্যার, মেয়েটার সঙ্গে এটাই আমার শেষ দেখা। সাইকিয়াট্রিস্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করল। আমি চলে আসার পর মেয়েটি না-কি খুব কেঁদেছে। কাজেই আমি তার ওপর মেন্টাল ট্রেস তৈরি করেছি। Trauma না কী যেন হয়েছে। হারামজাদা দেশ তো স্যরি। হারামজাদা দেশের হারামজাদা নিয়মকানুন। Mother Fuck Country.

স্যার, সরি। বেশি রেগে গিয়েছি। কী বলতে কী বলছি। বেয়াদবি নিজগুণে মাফ করবেন।

মেয়েটার জন্যে তারা নতুন Foster Family বের করে। তার ঠিকানা আমি জানি না। একবার শুনেছি স্কুলে সে খুব ভালো করছে। তাকে সাধারণ স্কুল থেকে সরিয়ে Gifted Children-এর স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পর দশ বছর কেটে গেছে। আমি আমার মতো আছি। ক্যাব চালাই। ব্যাংকে টাকা জমাই। ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখে ঘোরাঘুরি করি ঐ রাস্তায়, যেখানে প্রথম আনোভা এবং তার মার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। যদি সেই মহিলার সঙ্গে দেখা হয়। দেখা হয় নি।

আনোভার দেয়া একশ ডলারের নোটটা এখনো আমার কাছে আছে। স্যার, নোটটা কি দেখবেন?

No comments