বোবা জাদুকর – ধ্রুব নীল

বোবা জাদুকর – ধ্রুব নীল

ঠিক যখনই আমি অবাক হলাম, তখন থেকেই গল্পটার শুরু। অবাক হওয়ার মতো ঘটনা খুব একটা ঘটে না আজকাল। এমনকি জাদু দেখেও দর্শকদের অনেককে হাই তুলতে দেখেছি আমি। মাথায় হ্যাট ও জোব্বা পরা ছয় ফুট লম্বা লোকটার একের পর এক কসরতেও কেউ হাততালি দিচ্ছিল না। আমি বরং জানালা দিয়ে বাইরে দেখছিলাম এবং মনে হচ্ছিল সুনসান রাত দুটোয় গুলিস্তানের নিউ স্টার থিয়েটারের বাইরে অবিরাম ঝরতে থাকা কুয়াশাগুলোই বরং রহস্যময়।

অবাক হওয়ার প্রসঙ্গে আসি। জাদুকর তার হাতার ভেতর থেকে কবুতর বের করে আতশবাজি পুড়িয়ে যখন যথারীতি একটা ঝুল ঝাড়ার ঝাড়ু বানাল (তারা বরাবরই এই জিনিসটা বানায়), তখন আমার সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল টেবিলে বসে থাকা চুপচাপ খরগোশটার। অবাক হলাম, কারণ আমার চোখে চোখ পড়তেই খরগোশটা তার চোখ নামিয়ে ফেলল। অবিকল মানুষের মতো! কেমন যেন হতাশা! না ঠিক হতাশা নয়, বরং কিছু লুকাতে চাওয়ার ইচ্ছা। সঙ্গে চাপা ক্ষোভ। যেন আমার চোখে চোখ পড়লেই খরগোশ থেকে মুরগির বাচ্চা হয়ে যাবে সে। অবশ্য তার পায়ের সঙ্গে বাঁধা চেইনটা আমার নজর এড়াল না।

জাদুকর খরগোশটাকে দিয়ে কোনো জাদু দেখাচ্ছিল না। সম্ভবত শেষে একটা কিছু দেখাবে। মনের খচখচানি গেল না আমার। মনের এই খচখচানিটাকে বলতে পারেন একটা ফোবিয়ার মতো। এটা দূর না করা পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে। এই খচখচানি দূর করতে গিয়ে এর আগে অনেক বিপদে পড়েছি আমি।

জাদু দেখানো শেষ। বলে রাখা ভালো, পুরো শোতে জাদুকরকে আমি একটা কথাও বলতে শুনিনি। এমনকি হুমহাম শব্দও না। শুধু মুখে সারাক্ষণ একটা হাসি লেগে ছিল। ওটা সম্ভবত হাসি ছিল না। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হবে ওটা হাসি নয়, জাদুকরের মুখের গড়নটাই অমন।

খচখচানি দূর করতেই হবে। তাই কনকনে ঠান্ডায় কানটুপির ওপর ভরসা করে পিছু নিলাম জাদুকরের। জাদুকর লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটছে। জলদি বাড়ি ফেরার কোনো শর্টকাট ট্রিকস তার জানা নেই। আমিও হাঁটছি জোরসে। গুলিস্তান থেকে শাহবাগ। তারপর ধানমন্ডির পুরোনো একটা তিনতলা বাড়ি। গেটের সামনে থামল জাদুকর। আমিও। একটু গ্যাপ রেখে। জাদুকরের ভাব দেখে মনে হচ্ছিল গেট খোলার মন্ত্রটা মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু না, খানিক পর চাবি বের করে খুলল। তড়িঘড়ি এগিয়ে এলাম। যেন এই বাড়ির দোতলার ভাড়াটে আমি। জাদুকর আমার দিকে তাকাল। চিনতে পারার কথা নয়। কিছু বলল না। এবার ধারণা পোক্ত হলো, জাদুকর নিশ্চয়ই বোবা।

জাদুকর নিচতলার বাসিন্দা। ভেতরে অন্ধকার। আমি সামনের খালি জায়গায় বসে দুটো হাসনাহেনা গাছ পরখ করছিলাম। যেন আমি বিশাল কোনো উদ্ভিদবিদ। জাদুকর আমার দিকে একবারও তাকায়নি। এর মাঝে শুধু রাস্তার আলোয় তার জোব্বার পকেটের ভেতর থেকে খুদে প্রাণীটাকে একবার উঁকি দিতে দেখেছি। কুয়াশার কারণে ভালো দেখিনি। এর মধ্যে জাদুকর আমার দিকে একবারও না তাকিয়ে ঢুকে গেল তার নিচতলার ফ্ল্যাটে।

এবার গোয়েন্দা হওয়ার পালা। হ্যাট পরা জাদুকর এ বাসায় একা থাকে। বাইরে থেকে লক করা ছিল দরজা। বাসায় জাদুকর সম্ভবত নতুন। কারণ, তালা খোলার সময় আসল চাবিটা চিনতে তার অনেক সময় লেগেছে। এমনকি ভেতরের বাতি অন করতেও সময় নিয়েছে মিনিট পাঁচেক। অথবা সে ভীষণ ভুলোমনা। যা থাকে কপালে, নক করব ঠিক করলাম। দাঁড়ালাম পুরোনো কাঠের দরজার সামনে। নক করার আগে মৃদু ধাক্কা দিতেই খুলে গেল দরজা। মনে হলো আমার জন্যই দরজা খোলা রেখেছে। অথবা সে ভীষণ আত্মভোলা।

জাদুকর ভেতরের একটা কক্ষে। জিনিসপত্র রাখছে। ওটা সম্ভবত তার জাদুর কারখানা। আমি অন্ধকার করিডরে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে। জাদুকর আমার দিকে একবার মাথা ঘোরালেও অন্ধকারের জন্য ঠাহর করতে পারেনি। আমিও এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছি, যেন ধরা পড়লেও আমার কিছু যায়-আসে না।

পাশের আরেকটা কক্ষে টেবিলে বসে জাদুকর খেতে বসল। সবজির সালাদের মতো কী যেন খাচ্ছে কচকচ করে। নির্বিকার চেহারা। শুধু হাসিটা গায়েব। এটাই সুযোগ। জাদুর কারখানায় ঢুকে পড়লাম চোরের মতো। পুরোনো মরচে পড়া গন্ধ। বাজে বোঁটকা গন্ধও নাকে বাড়ি খাচ্ছে। কত দিন যে এসব ঝাড়পোঁছ করে না কে জানে। কিন্তু জাদুকরের তো এ বাসায় নতুন হওয়ার কথা ছিল। ঠিক মিলছে না ব্যাপারটা।

সেলফোনের টর্চ অন করলাম। শিকলে বাঁধা খরগোশটা নজরে পড়ছে না। হুটোপুটির শব্দও পাচ্ছি না। নাকি ওটা মন খারাপ করে কোনো খুপরির ভেতরে ঘুমাচ্ছে। হাতড়াতে লাগলাম এদিক-ওদিক। মৃদু শব্দ করার চেষ্টা করলাম। খরগোশের কান তাতে সতর্ক হবেই। পানি ঢালার শব্দ। জাদুকরের খাওয়া শেষ। এখন নিশ্চয়ই ঘুমাবে। ঘুমাক। সময় পাওয়া যাবে তাতে। বসে পড়লাম একটা ধুলোমাখা চেয়ারে। চোখের সামনে পুরোনো মরচে পড়া একটা বাক্স। খালি। হাতে নিলাম। ঢাকনাটা অদ্ভুত। ঢাকনাটা আবার খুলতেই হুড়মুড় করে একগাদা ধুলোমাখা রঙিন কাপড় উড়ে এল আমার মুখে। সশব্দে হাঁচিটা দিয়েই মরার মতো চুপ মেরে গেলাম। নাহ্, কোনো সাড়া নেই।

টেবিলে রেখে উঠলাম। আড়চোখে দেখছি। জাদুকর ব্যাটা গুটিসুটি মেরে সোফায় শুয়ে আছে। মাথায় হ্যাট। জোব্বাটাও ছাড়েনি। প্রথমে ভেবেছি ঘুমের ভান। নিশ্চিত হলাম ঘড়ঘড় শব্দ শুনে। ঘুমের মাঝে একবার ঢেকুরও তুলল। সাহস করে এগিয়ে এসে মাথা ঝুঁকে পরখ করলাম একবার। নাহ্, সত্যিই ঘুমাচ্ছে বেচারা।

সবগুলো ড্রয়ার চেক করলাম। এখানে-ওখানে। এখন আর শব্দ করা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। জাদুকর ঘুমাচ্ছে। সব তছনছ করে ফেললাম। এরপর এগিয়ে গেলাম কোনায় পড়ে থাকা পুরোনো বুকসেলফটার দিকে। সব জাদুটোনার বই। মন্ত্র লেখা বইও আছে। হাসলাম। জাদুকরের আবার মন্ত্র! বইয়ের আড়ালে খরগোশের লুকানোর কথা নয়, তবু বই আর সেলফ নিয়ে কিছুক্ষণ টানাহেঁচড়া চলল। বুকসেলফে ঠায় তাকিয়ে রইলাম। পুরোটা বইয়ে ঠাসা। একটা ছাড়া। ওটা ডায়েরি। অনেক দিন ধুলাবালুতে ঢাকা। কাগজগুলো মমির মতো। ধুলায় হাত ভরে গেল। ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে। একটা ছোট্ট করে কাশি দিলাম। এবার আর টেনশন লাগছে না। ডায়েরির পাতা ওল্টাতেই পরিচয়, ‘জাদুকর চন্দ্রাচার্য। তারিখ উনিশ এগারো আঠারোশত বত্রিশ।’ পাতার পর পাতা ঘটনার বিবরণ। নতুন জাদু শেখার অভিজ্ঞতা। পূর্বপুরুষ কারও ডায়েরি হবে হয়তো। সব ঘটনা আঠারো শ বত্রিশ থেকে আটত্রিশের মধ্যে। চলে গেলাম শেষ পাতায়। চমকে উঠলাম। একটা ছবি। ছবির নিচে তারিখ। সেটাও আঠারো শ সালের। জাদুকরের চেহারা অবিকল তার পূর্বপুরুষের মতো। ছবির পেছনে একটা লেখা। ঝাপসা। সেলফোনের টর্চ ধরে পড়তে শুরু করলাম।

‘আজি দ্বিপ্রহরে যে জাদুখানা আমি দেখাইবার অভিপ্রায় নিয়া আছি, উহা যেনতেন জাদু নহে। উহার জন্য লাগিবে প্যাঁচার ঘাড়ের হাড় ও কাকের বুকের শুকনা মাংসপিণ্ড।’ এরপর জাদুর বিস্তর বর্ণনা। কয়েক লাইন চোখ এড়িয়ে গেল। শেষের দিকে লেখা ‘হিবলুটার আজ মেজাজ অন্য রকম। তাহাকে বেজায় উৎফুল্ল দেখাইতেছে। তাহাকে ভালোমতন আহার করাইয়াছি। এখন সে আমার কোল হইতে কিছুতেই নামিতে চাহে না। তাহার এমনতর রূপ ইতিপূর্বে দেখা যায় নাই। সে যে বেজায় খুশির ভান করিয়া আছে, সেটাও মনে হইল। আমার হ্যাটখানার মধ্যে যাবতীয় জাদুর মন্ত্র ও উপকরণ রাখিয়াছি। এখন ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করিব আর জাদুর প্রস্তুতি লইব।’ এরপর কয়েক লাইন গ্যাপ। এক-দুই লাইন পড়া গেল না। একটা কিছু ঘটেছে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনার বিবরণ লেখার চেষ্টা যে বিফলে গিয়েছিল সেটা স্পষ্ট।

‘হিবলু কেমন যেন করছে। আমার তন্দ্রা… হিবলু হাসল…হিবলু আবার হাসল…হিবলু আমাকে আদর করছে…আমার কপালে থাবা। আহা…ঘুম…হ্যাট… লিখতে কষ্ট…হিবলুর হাতে হ্যাট। ও…আমি… নাহ্…।’

ব্যস এটুকুই। কী ঘটল কিছু বোঝা গেল না।

‘হিবলু!’ আমি কিছুটা শব্দ করেই বিড়বিড় করলাম। সঙ্গে সঙ্গে বিচিত্র একটা শব্দ কানে বাড়ি খেল। সচকিত আমি। ঘুম ভেঙে গেছে জাদুকরের! আমার দিকে তাকিয়ে আছে!

মধ্যরাতে এ ধরনের ভয়ানক চোখাচোখির স্থায়িত্ব মাপা কঠিন। আমি জাদুকরের চোখ থেকে চোখ সরাচ্ছি না। সরালেই যেন মহা অনর্থ ঘটে যাবে। জাদুকর আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে রাগ নেই, প্রশ্ন নেই, হাসি নেই, ক্রোধ নেই। কী ভয়াবহ! সে বসে আছে সোফায়। ঠায় তাকিয়ে আমার দিকে। আমি এক পা এগিয়ে গেলাম। সে নির্লিপ্ত। আমি ঝট করে চোখ সরিয়ে আবার তাকালাম। ঠিক আগের মতোই। মরা মানুষের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

‘ইয়ে মানে, দুঃখিত।’

বোবা জাদুকর
অলংকরণ: জাহিদুল হক
জাদুকর মাথা খানিকটা উঁচু করল। যেন আমার কথা বুঝতে পারেনি। কানে শোনে না? তা কী করে হয়! আমি হিবলু বলে একটু জোরেই ডেকে ফেলেছি সম্ভবত। ওটা শুনেই তো…। জাদুকর উঠে দাঁড়াল। নির্লিপ্ত দৃষ্টি। আমার চোখ থেকে চোখ সরাল। পা দুটো নড়াতে পারছি না একচুল। এত ভারী। জাদুকর উঠে একটা ছোট টেবিলের সামনে দাঁড়াল। টেবিলের ওপর রাতের আধখাওয়া খাবার রাখা। একটা গাজর হাতে নিল। এরপর নির্বিকার চিবাতে লাগল। কচকচ শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। ওই টেবিলটার ড্রয়ার খুলল। একটা সিক্রেট চেম্বার বের করল। এরপর তুলে নিল খাঁচাটা। ভেতরে ঘুমাচ্ছে সেই খরগোশটা! ওটাকে ভালো করে দেখে নিল জাদুকর। আমার কপালে ঘাম। রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। জাদুকর আমার ওপর হামলে পড়ছে না। এমন ভাব ধরে আছে, যেন আমি রুমে নেই।

‘খরগোশটাকেই দেখতে এসেছিলাম।’

‘হুম?’

এবারও আমার কথা বুঝতে পারেনি। সে কি বাংলা বোঝে না?

‘খরগোশটা অদ্ভুত। এভাবে খরগোশরা ঘুমায় না।’

আবারও ঘোঁৎজাতীয় একটা শব্দ করল। তারপর খরগোশটাকে টেবিলে রেখে আমার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করল। আমি পেছাতে থাকলাম। এক পা দুই পা। জাদুকর বিশালদেহী। পেরে ওঠার প্রশ্নই আসে না। আমার নাকের ডগা বরাবর মাথা ঝাঁকিয়ে মুখ নামাল জাদুকর। দুই চোখে তখনো ভৌতিক নির্লিপ্ততা। যেন প্রচণ্ড রাগ করে তাকালেই একটু স্বস্তি পেতাম আমি। আমার সমস্ত শরীর অসাড় হয়ে যেতে লাগল। জাদুকর তার হ্যাটটা খুলে হাতে নিল। আমাকে দিয়েই যেন সে তার জাদুর শেষ অঙ্ক মঞ্চায়িত করতে চায়। এমন সময় চোখ গেল টেবিলে রাখা খরগোশের দিকে। আমার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে! যেন বলতে চায়, ‘জেনেশুনে এত বড় বিপদে ফেললে নিজেকে!’ চোখ বন্ধ করে সমস্ত সাহস সঞ্চয় করলাম। যদিও সেটা বিশেষ কিছু ছিল না। নিজেকে বাঁচানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দুহাতে ঝটকা মেরে জাদুকরের হ্যাটটা ছুড়ে দিলাম। ওটা সোজা গিয়ে পড়ল টেবিলের নিচে। খরগোশটা উবু হয়ে হ্যাটটা দেখল। জাদুকর হতভম্বের মতো আমার দিকে আর হ্যাটের দিকে তাকাচ্ছে। কী করবে বুঝতে পারছে না। দুহাত এগিয়ে আমার মুখে খামচি দিতে চাইল। আমি হাত দিয়ে তাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। আমার মনে হলো বিশালদেহী জাদুকর খানিকটা ভয় পেল। সাহস বেড়ে গেল এটা ভেবে। ঠং করে গড়িয়ে পড়ল কী যেন। খরগোশটা খাঁচাসহ গড়িয়ে পড়ল সোজা হ্যাটের ভেতর। একটা অস্বাভাবিক চিৎকার। আলো-আঁধারিতে আমি বোধ হয় ভুল দেখছি। জাদুকর ধীরে ধীরে উবে যাচ্ছে! সামনের দাঁত দুটো লম্বা হয়ে যাচ্ছে তার। ছোট হতে হতে আরও ছোট। ঠিক যেন সেই ভীত খরগোশ! ওদিকে হ্যাটের পেছনে একটা লম্বাটে ছায়ামূর্তি। ছয় ফুট লম্বা হবে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। রক্তচাপ অনেক বেড়েছে। মাথা চেপে বসে পড়লাম। চোখ খুলব না ঠিক করেছি। যা হওয়ার হোক।

সকাল হয়েছে। আশপাশের কোলাহল কানে আসছে। চোখ মেলে তাকালাম। সোফায় হাসিমুখে বসে আছে হ্যাটওয়ালা জাদুকর। জোব্বাটা বেশ চকচক করছে। মুখে আমুদে হাসি। আগের সেই নকল হাসির বিন্দুমাত্র ছাপ নেই।

‘কী, ঘুম হলো?’

আমি জবাব দিতে চাইলাম। মুখ দিয়ে শব্দ বের হলো না। জাদুকরকে আগের চেয়ে অনেক বেশি লম্বা মনে হচ্ছে। ঘরটার আকারও অনেক বড় হয়ে গেছে।

‘তুমি আমাকে মুক্ত করেছ। এ জন্য ধন্যবাদ।’

আমি বলতে চাইলাম যে আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যই কি তুমি সারা রাত এভাবে সোফায় বসে ছিলে? কিন্তু আমি একটা শব্দও বলতে পারলাম না। আয়েশ করে হাই তুললাম, আড়মোড়া ভাঙলাম। নিজের এমন আচরণে যে আমার অবাক হওয়ার কথা, সেটাও মাথায় ঢুকল না।

‘তুমি হয়তো বুঝে ফেলেছ এতক্ষণে যে আমিই আসল জাদুকর। আর ও ছিল…সে যাক। তোমার এখন এসব না জানলেও চলবে। যাও, বের হও এবার।’

বিশালদেহী জাদুকর তেড়ে এল আমার দিকে। মনে হলো একটা বিশ ফুটের দৈত্য। প্রাণপণে ছুট লাগালাম। বেশ দৌড়াচ্ছি তো আমি! এক ছুটে অতিকায় এক দরজার ফাঁক গলে সোজা বাগানে আমি। গেটের চওড়া ফাঁক দিয়ে শরীরটাকে ঢুকিয়ে দিতে মোটেও বেগ পেতে হলো না। আহা! কী দারুণ বাতাস! মুক্তির স্বাদ নিলাম ইচ্ছামতো। বিশ্বাস করুন, একবিন্দু টেনশন নেই আমার। আরে! ওই যে খাবার। মজার সব খাবারের ঘ্রাণ আসছে। ডাস্টবিনে তাহলে এমন মজার খাবার পাওয়া যায়! আমার ওটাই চাই! ছুটে গেলাম। পথে দু-একজন আমাকে দেখে সরে দাঁড়াল, দুটো লাথিও জুটল। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আহা! কী মুচমুচে গাজর!

No comments