ঝড়ে-জলে-অন্ধকারে – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

ঝড়ে-জলে-অন্ধকারে – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

সেবার ঝাঁপুইহাটি গ্রামে ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়েছিলুম। উদ্যোক্তা তরুণ সংঘ নামক ক্লাবের ছেলেগুলি খুব ভদ্র। তাই তাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করতে পারিনি। কথামতো তারা গাড়ি এনেছিল। কলকাতা থেকে গাড়িতে চেপে ঝাঁপুইহাটি পৌঁছতে ঘণ্টা তিনেক লেগেছিল। সভা শুরু হওয়ার কথা পাঁচটায়। ঠিক সময়েই পৌঁছেছিলুম।

গ্রামটি বনেদি, তা গাছপালার ফাঁকে অনেক পুরোনো একতলা-দোতলা বাড়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। নতুন পাকা বাড়িও কম নেই। তবে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন যেখানে করা হয়েছে, সেটা গ্রামের শেষ দিকটায় একটা ছোট্ট খেলার মাঠ। মাঠের একপ্রান্তে পুরোনো একটা মন্দির। অন্যপ্রান্তে একটা বিশাল বট গাছ। গ্রামের উৎসব পালা পার্বণ উপলক্ষে এখানে মেলাও বসে। ক্লাবের ছেলেরা আমাকে একথা জানিয়েছিল।

সুন্দর রঙিন প্যান্ডেল। সেখানে টেবিল-চেয়ার পাতা ছিল। পেছনে রবীন্দ্রনাথের একটা বড় ছবি। মাইকে এক যুবক ঘন-ঘন ঘোষণা করছিল,–মাইক টেস্টিং! হ্যালো! ওয়ান…টু…থ্রি! প্যান্ডেলের সামনে নিচে ছোট-ছোট ছেলেমেয়েরা তুমুল চ্যাঁচিমেচি করছিল। তাদের পেছনে নানা বয়সি লোকের ভিড় জমেছিল। আমাকে প্যান্ডেলের পেছন দিকে চেয়ারে বসিয়ে একটি ছেলে কাচুমাচু মুখে বলেছিল,–চা খান স্যার! একটু দেরি হবে। আমাদের এলাকার জননেতা সবার প্রিয় পন্টুদা এলেই সভা শুরু করব।

একটু পরে মাইক্রোফোনে হিন্দি ফিল্মের গান শুরু হয়ে গেল। আমি তো অবাক। এ কী করছে এরা? অনুষ্ঠানের সভাপতি স্থানীয় স্কুলের হেডমাস্টারমশাই। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে জিভ কেটে বললেন,–দেখছেন কাজ?

বলে তিনি ব্যস্তভাবে একটি ছেলেকে ডাকলেন।–ও অশোক! রবীন্দ্রজয়ন্তীতে এ কী গান বাজছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজাতে বলল।

অশোক ছুটে গেল মাইকওয়ালার কাছে। তারপর ফিরে এসে বলল, মাইকম্যানের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের টেপ নেই স্যার।

হেডমাস্টারমশাই বললেন,–তাহলে থামাতে বলো! ছ্যা-হ্যা! রবীন্দ্রনাথবে অপমান করা হচ্ছে যে!

অশোক আবার ছুটে গেল। নবীন সংঘের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে ফিরে এল। বলল,–স্যার! মাইক বাজানো বন্ধ করলে লোক জমবে না। একটু ওয়েট করুন স্যার! এক্ষুনি পন্টুদা এসে গেলেই ওসব বন্ধ হয়ে যাবে।

অবশ্য মাঝে-মাঝে গান থামিয়ে এক যুবক ঘোষণা করছিল,–বন্ধুগণ! আজ আমাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিরূপে উপস্থিত হয়েছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হেরম্বকুমার ইয়ে, মানে–

একটি ছেলে খাপ্পা হয়ে তাকে চাপা গলায় বলে দিল, হেরম্বকুমার ঘাঁটি।

মাইকে কথাটা শোনা গেল। কিন্তু কী আর করা যাবে? আমার নাম হেমন্তকুমার হাটি। আঁপুইহাটিতে এসে হয়ে গেলুম কি না হেরম্বকুমার ঘাঁটি! যাই হোক, আবার হিন্দি গানের গর্জনে সব চাপা পড়ে গেল। কতক্ষণ পরে আলো জ্বলে উঠল প্যান্ডেলে এবং পেছনদিকের তেরপলে ঘেরা জায়গাতে। ঘড়ি দেখলুম। ছটা বেজে গেছে।

ছটা পনেরো মিনিটে হঠাং মাইক্রোফোনের গান থেমে গেল। সেই যুবকটি ঘোষণা করল,-বন্ধুগণ! আমাদের এরিয়ার বিশিষ্ট জননেতা শ্রীপণ–পণ-পঞ্চানন ঢোল মহাশয় আমাদের সবার প্রিয় নেতা পন্টুদা এইমাত্র এসে উপস্থিত হয়েছেন। এখনই সভা শুরু হবে। মাননীয় প্রধান অতিথি সুসাহিত্যিক হেরম্বকুমার ঘাঁ-ঘা– ঘাঁটি মহাশয় এবং এই সভার সভাপতি হেডমাস্টার মহাশয় শ্রীঅহিভূষণ চ-চ-চট্টো সরি–চক্রবর্তীকে প্যান্ডেলে আসার জন্য অনুরোধ করছি।

যাই হোক, প্যান্ডেলে তো গিয়ে বসলুম। প্রথমে আমন্ত্রিত অতিথিবর্গকে মাল্যদান ঘোষণা করলে যুবকটিকে সরিয়ে আরেক যুবক ঘোঘাষণা করল, সবার আগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে মাল্যদান করবেন আমাদের সবার প্রিয় পন্টুদা!

পন্টুদা বেঁটে মোটাসোটা মানুষ। গায়ে হাতকাটা ফতুয়া, পরনে ধুতি। রবীন্দ্রনাথের ছবিতে মাল্যদান করেই মাইকের সামনে চলে এলেন। করজোড়ে নমস্কার করে বললেন, বন্ধুগণ! তরুণ সংঘের প্রিয় তরুণদল! প্রধান অতিথি সাহিত্যিক মহাশয়! সভাপতি মহাশয়! এখনই বাবুগঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে আমাকে যেতে হবে। তাই দুঃখের সঙ্গে বিদায় নেওয়ার আগে বিশেষ করে তরুণ সংঘের তরুণ দলের উদ্দেশে দুটো কথা বলে নিই। তোমরা তরুণ! তোমরা জাতির ভবিষ্যৎ! তাই তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তোমাদের জন্য লিখেছেন,

‘ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণীতল অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চলরে চলরে চল!’

সর্বনাশ! এ যে রবীন্দ্রনাথের লেখা নয়। এই কবিতা বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত মার্চ সঙ্গীত। কেউ এঁকে বাধা দিচ্ছে না কেন?

হেডমাস্টারমশাই আমার দিকে তাকালেন। আমি তার দিকে তাকালাম। তারপর হেডমাস্টারমশাই ফিসফিস করে বললেন,–ওঁকে থামাও। ওঁকে থামাও।

কার সাধ্য পন্টুদাকে থামায়? বেঁটে মানুষ। একহাত মুঠো করে ওপরে তুলে গর্জন করে কবিতা বলছেন, বিশ্বকবি তোমাদের আরও বলেছেন–

‘…নব-নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশ্মশান
আমরা দানিব নতুন প্রাণ…’

হ্যাঁ। আমাদের অজ্ঞাতসারে পন্টুদাকে থামানোর আয়োজন চলছিল। বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তীতে এই উল্টোপুরাণ সে বরদাস্ত করবে কেন?

আচম্বিতে চোখ ধাঁধানো বিদ্যুৎ ঝিলিক দিল। পরক্ষণে কড়কড়-কড়াৎ করে কানে তালা ধরানো মেঘ ডাকল। তারপরই প্যান্ডেল মচমচ করে উঠল। আবার বিদ্যুতের ঝিলিক। আবার মেঘ গর্জন। তারপর সব আলো নিভে গেল। কারা চেঁচিয়ে উঠল, পটুদাকে টর্চ দেখাও! টর্চ দেখাও!

তাঁকে কারা টর্চের আলো জ্বেলে ধরাধরি করে প্যান্ডেল থেকে নামাচ্ছে দেখলুম। ততক্ষণে এসে পড়েছে সে। তার নাম কিনা কালবোশেখি। প্যান্ডেলের তেরপল আর কাপড়ের সাজ নৌকোর পালের মতো উড়তে থাকল। প্যান্ডেলের বাঁশগুলো মচমচ শব্দে আর্তনাদ করতে লাগল। ওদিকে ছোট ছেলেমেয়েদের চিৎকার, কান্না, বয়স্কদের হট্টগোল–সব মিলিয়ে সে এক বিভীষিকা!

প্যান্ডেল ভেঙে পড়ার ভয়ে লাফ দিয়ে নেমে পড়েছিলুম। সভাপতি হেডমাস্টারমশাইয়ের আর্তনাদ শুনতে পেলুম, অশোক ও অশোক! আমি চাপা পড়ব যে!–

তারপর নিরাপদ দূরত্বে যেই পৌঁছেছি, শুরু হয়ে গেল চড়বড় শব্দে বৃষ্টি। কালবোশেখির ঝড়ের সঙ্গে জোরালো বৃষ্টি এসে প্রলয়কাণ্ড বাধাল।

মাথা বাঁচাতে বিদ্যুতের ঝিলিকে বটগাছটাকে দেখামাত্র ছুটে গেলুম। কিন্তু মুহুর্মুহু মেঘের হাঁকডাক, বিদ্যুতের ছটা আর বৃষ্টির দাপটে সেখানে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে ভরসা পেলুম না। বটগাছটার ডাল ভেঙে পড়তে পারে। বাজ পড়তেও পারে বটগাছের মাথায়। প্রাণভয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয় খুঁজছিলুম।

সেই সময় গাছপালার ফাঁকে একটা একতলা বাড়ি বিদ্যুতই দেখিয়ে দিল। ভিজতে ভিজতে এবং ঝড়ের দাপটে কুঁজো হয়ে সেই বাড়ির দিকে ছুটে চললুম।

বাড়িটার সামনে বারান্দা আছে। কিন্তু বৃষ্টির বাঁকা তিরে সেখানে বিদ্ধ হচ্ছি। হঠাৎ দেখলুম, বারান্দার একপাশে একটা খোলা দরজা। মরিয়া হয়ে ঢুকে পড়লুম ঘরে। অমনি কেউ খ্যানখেনে গলায় বলে উঠল,-কে? কে?

বললুম, আজ্ঞে আমি।

–আমি কে? আমি কি মানুষের নাম হয় নাকি?

–আমার নাম হেমন্তকুমার হাটি।

–হাটি? এ পদবি তো আমাদের ঝাঁপুইহাটিতে নেই কারও। বাড়ি কোথায়?

–কলকাতা!

–অ্যাঁ? কলকাতার নোক এখানে কেন?

–আজ্ঞে, আমি এখানে রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এসেছিলুম। আমি একজন লেখক।

–লেখক? কী লেখেন?

অন্ধকারে কে কথা বলছে, তাকে দেখছে পাচ্ছি না। বিরক্ত হয়ে বললুম, গল্প লিখি।

–কীসের গল্প লেখেন, শুনি?

–ভূতের গল্প–

–কী? কী? ভূতের গল্প লেখেন?

একটু হকচকিয়ে গেলুম খ্যানখেনে বিদঘুঁটে গলার ধমকে। বললুম,–চোরের গল্পও লিখি।

–কী? কী? চোরের গল্পও লেখেন?

–আজ্ঞে হ্যাঁ। মানেসব রকমের গল্পই লিখি।

খ্যাঁক খ্যাঁক করে অদ্ভুত হাসল লোকটা। এই বাড়ির কর্তাই হবে নিশ্চয়। সে কয়েকবার হেসে বলল, তা হেরম্ববাবু

–আজ্ঞে, আমার নাম হেমন্ত।

–এই হল! মাইকে তো অ্যানাউন্স করছিল হেরম্বকুমার–কী যেন? ঘাঁটি! যাকগে। তা ঘাঁটিবাবু, আপনি ভূতের গল্প লেখেন। চোরের গল্প লেখেন। কী করে লেখেন? কখনও ভূত দেখেছেন?

–আজ্ঞে না। ভূতে আমার বিশ্বাস নেই। কল্পনা করে লিখি। যেমন ধরুন চোরের গল্প। আমি নিজে কখনও চুরি করিনি। তবু কল্পনার জোরে চোরের গল্প লিখি।

এই সময় বাইরে থেকে কেউ ঘরে ঢুকল। বিদ্যুতের ঝিলিকে এক নিমেষে আবছা একটা লোককে দেখতে পেলুম মাত্র। সে বলল, খুড়োমশাই! কার সঙ্গে গল্প করছেন?

–কে রে? পাঁচু নাকি? কোথায় ছিলিস এই ঝড়-বাদলায়।

পাচু বলল, শ্মশানতলায় মড়াপোড়ানো দেখছিলুম খুড়োমশাই! ঝড়বৃষ্টিতে লোকগুলো বেচারা আধপোড়া মড়াটাকে ফেলে পালিয়ে গেল। মড়াটা আমাকে দেখতে পেয়ে কাকুতিমিনতি করতে লাগল। একটু কাছে থাকো না দাদা! কথায় বলে, একা

বোকা!

খুড়োমশাই সেই খ্যাক খ্যাক হেসে বলল,–তা তুই তাকে ফেলে চলে এলি যে?

–না, না। পালিয়ে আসা যায়? আধপোড়া মড়া। চিতার কাঠ ভিজে গিয়েছিল? তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসছিলুম। হাঁটতে পারে না। ওই সে আসছে এতক্ষণে।

কথাবার্তা শুনে ততক্ষণে প্রচণ্ড আতঙ্কে আমার বৃষ্টিভেজা শরীর অবশ হয়ে গেছে। এরা কারা? তাছাড়া এখনই যে-কোনও সময়ে শ্মশানের চিতা থেকে আধপোেড়া একটা মড়া এসে পড়বে! আমি দেয়াল ঘেঁষে একটু-একটু করে দরজার দিকে সরে যাচ্ছিলুম।

পাঁচু বলল,–এই লোকটা কে খুড়োমশাই?

খুডোমশাই বলল, কলকাতার এক লেখক। বলে কিনা ভূতের গল্প লেখে। চোরের গল্প লেখে। হেরম্ববাবু! এই দেখুন একজন চোর। এর নাম পাঁচু-চোর। খুব বিখ্যাত চোর ছিল পাঁচু।

বললুম,–ছিল মানে?

–ও পাঁচু! এই বুদ্ধি নিয়ে লেখক হয়েছে। কালজ্ঞান নেই। ছিল যে অতীত কাল, তাও বোঝে না! ছ্যাঁ-ছ্যাঁ!

বাইরে কেউ বলে উঠল, আরে কী আশ্চর্য! বন্ধুড়ো যে! লোকটা তো আমাকে বলল না এই বাড়িতে তুমি আছো?

–কে রে? কিনু নাকি? আয়, আয়। এই পাঁচু! তুই কিনুকে চিনতে পারিসনি? গাধা কোথাকার!

পাঁচু রাগ করে বলল, খুড়োমশাইয়ের সব ভালো। শুধু এই এক দোষ। গাধা বলা! এইজন্য কথায় বলে, স্বভাব যায় না মলে।

দরজা দিয়ে কিনু ঘরে ঢুকে পড়ল। সে বলল,–পাচু আমাকে চিনতে পারবে কী করে? আমিই বা পাঁচুকে চিনতে পারব কী করে? দশ বছর আগে কালুডিহির ঘোঁতনবাবুর ঘরে একসঙ্গে সিঁদ কেটে ছিলুম। তারপর আর দেখাসাক্ষাৎ নেই। ছিলে কোথায় হে পাঁচু?

আমার নাকে এবার সত্যি মড়াপোড়া কটু গন্ধ লাগল। আমি দরজা দিয়ে পালানোর তালে আছি। কিন্তু আধপোড়া কিনুর মড়া যদি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে?

খুড়োমশাই এই সময় আবার এ্যাক-এ্যাক করে বিদঘুঁটে হেসে বললেন, কী হেরম্ববাবু? লেখক হয়েছেন। ভূতের গল্প লেখেন। চোরের গল্প লেখেন। স্বচক্ষে কখনও ভূত আর চোর–মানে চোর আর ভূত একসঙ্গে দেখেছেন?

বললুম,–মনে হচ্ছে, এবার দেখলুম।

কিনু বলে উঠল, কী সর্বনাশ! বন্ধুখুড়ো করেছ কী? ঘরে লেখক ঢুকিয়ে বসে আছো? তুমি ছিলে তল্লাটের কুঁদে দারোগাবাবু! তোমার দাপটে চোরে-ভূতে আর ভূতে-চোরে একঘাটে জল খেত। ঘরে লেখক ঢোকালে সব ফাস করে লিখে দেবে

যে! লিখবে, পুলিশের দারোগা ছিল যে, সে কিনা চোরে-ভূতে আর ভূতে-চোরে এক করে আড্ডা দিচ্ছে।

বললুম,–বঙ্কুবাবু! আপনিও তাহলে অতীত কালে?

খুড়োমশাই সগর্জনে বললেন, আমার নাম বন্ধুবিহারী ধাড়া। আমাকে নিয়ে গল্প লিখলে দুহাতে হাতকড়ি পরাব। সাবধান!

–আজ্ঞে না লিখব না। তবে একটা কথা বুঝতে পারছি না। ওরা দুজনে অতীতকাল। আর আপনিও অতীতকাল। কিন্তু ওরা সিঁদেল চোর। আর আপনি পুলিশের দারোগা। এই চোর-পুলিশ একত্র হয় কী করে, একটু বুঝিয়ে দেবেন? তাছাড়া চোরের খুড়োই বা পুলিশ হয় কী করে?

পাঁচু আর কিনু হি হি হি হি করে হেসে উঠল। বকুখুড়োও খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগল। তারপর বলল, ওহে লেখক! এটুকুও বোঝো না! তবে এই গানটা শোনো। বলে তিনি বিদঘুঁটে গলায় গান গেয়ে উঠলেন–

–হরি, ওহে দয়াময়!
এ ভব সংসারে চক্ষু মুদিলে
সবই একাকার হয়।।

পাঁচু অরা কিনু ধুয়া ধরল, হরি, ওহে দয়াময়।

এইবার পালানোর সুসময়। তিনজনে মিলে গান ধরেছে অন্ধকারে। আমি সেই সুযোগে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলুম। একটু দূরে টর্চের আলো জ্বলল। তখনও বৃষ্টি ঝরছে। তবে বাতাস কমেছে। ভিজে জবুথবু হয়ে সেই আলো লক্ষ করে ছুটে গেলুম। আমার ওপর টর্চের আলো পড়তেই কেউ বলে উঠল,–এই তো প্রধান অতিথি।

আরেক জন এগিয়ে এসে বলল, আরে! এ কী অবস্থা হয়েছে আপনার? ছিলেন কোথায়?

কাঁপতে কাঁপতে বললুম,–ওই একতলা বাড়িতে।

–কী সর্বনাশ! ওটা তো পোড়োবাড়ি। ওই বাড়িতে নাকি বন্ধুবিহারী ধাড়া নামে পুলিশের এক দারোগা থাকতেন। রিটায়ার করে মারা যান। তাই ওর ছেলেমেয়েরা এখন কলকাতায় আছে। কোনও ইয়ে-টিয়ে দেখেননি তো? মানে ভূ-ভূ

ঝটপট বললুম, না, না। বড্ড শীত করছে।

তারা ছাতার আড়ালে আমাকে নিয়ে চলল, মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করলুম, আর কখনও কোথাও কোনও অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে যাব না। রবীন্দ্রনাথের নামে নজরুল, দারোগা আর চোরের নামে ভূ-ভূ–

নাহ। কথাটা বলতে নেই। চেপে যাওয়াই ভালো।…

No comments