অনুকূল – সত্যজিৎ রায়

অনুকূল – সত্যজিৎ রায়

এর একটা নাম আছে তো? নিকুঞ্জবাবু জিজ্ঞেস করলেন।

আজ্ঞে হ্যাঁ, আছে বইকী!

কী বলে ডাকব?

অনুকূল।

চৌরঙ্গিতে রোবট সাপ্লাই এজেন্সির দোকানটা খুলেছে মাস ছয়েক হল। নিকুঞ্জবাবুর অনেকদিনের শখ একটা যান্ত্রিক চাকর রাখেন। ইদানীং ব্যবসায় বেশ ভাল আয় হয়েছে, তাই শখটা মিটিয়ে নেবার জন্য এসেছেন।

নিকুঞ্জবাবু রোবটটার দিকে চাইলেন। এটা হচ্ছে যাকে বলে অ্যান্ড্রয়েড, অর্থাৎ যদিও যান্ত্রিক, তাও চেহারার সঙ্গে সাধারণ মানুষের চেহারার কোনও তফাত নেই। দিব্যি সুশ্রী দেখতে, বয়স মনে হয় বাইশ-তেইশের বেশি নয়।

কী ধরনের কাজ করবে এই রোবট? জিজ্ঞেস করলেন নিকুঞ্জবাবু। ডেস্কের উলটো দিকের ভদ্রলোক একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন, সাধারণ চাকর যা পারে, ও তার সবই পারবে। কেবল রান্নাটা জানে না। তা ছাড়া, ঘর ঝাড়পোঁছ করা, বিছানা পাতা, কাপড় কাঁচা, চা দেওয়া, দরজা-জানলা খোলা বা বন্ধ করা–সবই পারবে। তবে হ্যাঁ–ও যা কাজ করবে সবই বাড়িতে। ওকে দিয়ে বাজার করানো চলবে না, বা পান-সিগারেট আনাতে পারবেন না। আর ইয়ে–ওকে কিন্তু তুমি বলে সম্বোধন করবেন। তুইটা ও পছন্দ করে না।

এমনি মেজাজ-টেজাজ ভাল তো?

খুব ভাল। সে-দিক দিয়ে ট্রাবল আসবে যদি আপনি কোনও কারণে ওর গায়ে হাত তোলেন। আমাদের রোবটরা ওটা একেবারে বরদাস্ত করতে পারে না।

সেটার অবিশ্যি কোনও সম্ভাবনা নেই; কিন্তু ধরুন, যদি কেউ ওকে একটা চড় মারল, তা হলে কী হবে?

তা হলে ও তার প্রতিশোধ নেবে।

কীভাবে?

ওর ডান হাতের তর্জনীর সাহায্যে ও হাই-ভোল্টেজ ইলেকট্রিক শক দিতে পারে।

তাতে মৃত্যু হতে পারে?

তা পারে বইকী! আর আইন এ-ব্যাপারে কিছু করতে পারে না, কারণ রক্ত-মাংসের মানুষকে যে শাস্তি দেওয়া চলে, যান্ত্রিক মানুষকে তা চলে না। তবে এটা বলতে পারি যে, এখনও পর্যন্ত এরকম কোনও কেস হয়নি।

রাত্তিরে কি ও ঘুমোয়?

না। রোবটরা ঘুমোয় না।

তা হলে এতটা সময় কী করে?

চুপ করে বসে থাকে। রোবটের ধৈর্যের অভাব নেই।

ওর কি মন বলে কোনও বস্তু আছে?

ওরা এমন অনেক কিছু বুঝতে পারে, যা সাধারণ মানুষ পারে না। এ গুণটা সব রোবটের যে সমান পরিমাণে থাকে তা নয়; এটা খানিকটা লাকের ব্যাপার। এ গুণটা সময়ে প্রকাশ পায়।

নিকুঞ্জবাবু রোবটটার দিকে ফিরে বললেন, অনুকূল, আমার বাড়িতে কাজ করতে তোমার আপত্তি নেই তো?

কেন থাকবে? ষোলো আনা মানুষের মতো গলায় বলল অনুকূল। তার পরনে একটা নীল ডোরা কাটা শার্ট আর কালো হাফপ্যান্ট, বাঁ পাশে টেরি আর পাট করে আঁচড়ানো চুল, গায়ের রঙ বেশ ফরসা, দাঁতগুলো ঝকঝকে আর ঠোঁটের কোণে সবসময়ই যেন একটা হালকা হাসি লেগে আছে। চেহারা দেখে মনে বেশ ভরসা আসে।

তা হলে চলো।

নিকুঞ্জবাবুর মারুতি ভ্যান দোকানের বাইরেই অপেক্ষা করছিল, অনুকূলের জন্য চেকটা দিয়ে রসিদ নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়লেন। তিনি লক্ষ করলেন যে, ভৃত্যের হাঁটাচলা দেখেও সে যে যান্ত্রিক মানুষ, সেটা বোঝার কোনও উপায় নেই।

নিকুঞ্জবাবু বাড়ি করেছেন সল্ট লেকে। বিয়ে করেননি, তবে বন্ধুবান্ধব কয়েকজন আছে, তারা সন্ধ্যাবেলা আসে তাস খেলতে। তাদের আগে থেকেই বলা ছিল যে, বাড়িতে একটি যান্ত্রিক চাকর আসছে। কেনার আগে অবিশ্যি নিকুঞ্জবাবু খোঁজ নিয়ে নিয়েছিলেন। এই ক মাসে কলকাতার বেশ কিছু উপরের মহলের বাড়িতে রোবট-ভৃত্য বহাল হয়েছে। মানসুখানি, গিরিজা বোস, পঙ্কজ দত্তরায়, মিঃ ছাবরিয়া–সকলেই বললেন তাঁরা খুব স্যাটিসফাইড, এবং তাঁদের চাকর কোনও ট্রাবল দিচ্ছে না। মুখ। খুলতে না খুলতেই ফরমাশ পালন করে আমার জীবনলাল, বললেন মানসুখানি। আমার তো মনে হয় ও শুধু যন্ত্র নয়, ওর মাথার মধ্যে মগজ আছে আর বুকের মধ্যে কলিজা আছে।

সাতদিনের মধ্যে নিকুঞ্জবাবুরও সেই একই ধারণা হল। আশ্চর্য পরিপাটি কাজ করে অনুকূল। শুধু তা-ই নয়, কাজের পারম্পর্যটাও সে বোঝে। বাবু স্নানের জল চাইলে সেটা দেবার সঙ্গে সঙ্গে সাবান তোয়ালে যথাস্থানে রেখে বাবু কী কাপড় পরবেন, কী জুতো পরবেন স্নান করে এসে, সেটাও পরিপাটি করে ঠিক জায়গায় সাজিয়ে রেখে দেয়। আর সব ব্যাপারেই সে এত ভব্য যে তাকে তুমি ছেড়ে তুই বলার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

নিকুঞ্জবাবুর বন্ধুদের অনুকূলকে মেনে নিতে একটু সময় লেগেছিল–বিশেষত বিনয় পাকড়াশি নিজের বাড়ির চাকরদের তুই বলে এমন অভ্যস্ত যে, অনুকূলকেও একদিন তুই বলে ফেলেছিলেন। তাতে অনুকূল গম্ভীর ভাবে বলে, আমাকে তুই বললে কিন্তু তাকেও আমি তুই বলব।

এর পর থেকে বিনয়বাবু আর কোনওদিন এ-ভুলটা করেননি।

নিকুঞ্জবাবুর সঙ্গে অনুকূলের একটা বেশ সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠল। অনুকূল বেশির ভাগ কাজই হুকুম দেবার আগেই করে ফেলে। এটা অবিশ্যি নিকুঞ্জবাবুর বেশ আশ্চর্য বলে মনে হয়, কিন্তু রোবট সাপ্লাই এজেন্সির মিঃ ভৌমিক বলেছিলেন যে, তাঁদের কোনও কোনও রোবটের মস্তিষ্ক বলে একটা পদার্থ আছে, চিন্তাশক্তি আছে। অনুকূল নিশ্চয়ই সেই শ্রেণীর রোবটের মধ্যেই পড়ে গেছে। ঘুমোনোর ব্যাপারটা সম্বন্ধে নিকুঞ্জবাবু ভৌমিকের কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেননি। যে এতটাই মানুষের মতো, সে সারারাত জেগে বসে থাকবে, এও কি সম্ভব? ব্যাপারটা যাচাই করতে তিনি একদিন মাঝরাত্তিরে চুপিসারে অনুকূলের ঘরে উঁকি দিতেই অনুকূল বলে উঠল, বাবু, আপনার কি কোনও দরকার আছে? নিকুঞ্জবাবু অপ্রস্তুত হয়ে না বলে নিজের ঘরে ফিরে গেলেন।

অনুকুলের সঙ্গে কাজের কথা ছাড়াও অন্য কথা বলে দেখেছেন নিকুঞ্জবাবু। তিনি দেখে আশ্চর্য হয়েছেন অনুকূলের জ্ঞানের পরিধিটা কত বিস্তীর্ণ। খেলাধূলা বায়স্কোপ থিয়েটার নাটক নভেল, সব কিছু নিয়েই কথা বলতে পারে অনুকূল। আর সত্যি বলতে কি, অনুকূল এসব বিষয় যত জানে, নিকুঞ্জবাবু তার অর্ধেকও জানেন না। বাহাদুরি বলতে হবে এই রোবট প্রস্তুতকারকদের। কত কী জ্ঞান পুরতে হয়েছে ওই যন্ত্রের মধ্যে।

কিন্তু সুসময়েরও শেষ আছে।

অনুকূল আসার এক বছরের মধ্যে নিকুঞ্জবাবু তাঁর ব্যবসায়ে কতকগুলো বেচাল চেলে তাঁর আর্থিক অবস্থার বেশ কিছুটা অবনতি করে ফেললেন। অনুকুলের জন্য মাসে তাঁর ভাড়া লাগে দুহাজার টাকা। সে-টাকা এখনও তিনি নিয়মিত দিয়ে আসছেন, কিন্তু কতদিন পারবেন সেটাই হল প্রশ্ন। এবার একটু বেশি হিসেব করে চলতে হবে নিকুঞ্জবাবুকে। রোবট এজেন্সির নিয়ম হচ্ছে যে, এক মাসের ভাড়া বাকি পড়লেই তারা রোবটকে ফেরত নিয়ে নেবে।

কিন্তু হিসেবে গণ্ডগোল করে দিল একটা ব্যাপার।

ঠিক এই সময় নিকুঞ্জবাবুর সেজোকাকা এসে উপস্থিত হলেন। বললেন, চন্দননগরে একা-একা আর ভাল লাগছে না, তাই ভাবলুম তোর সঙ্গে কটা দিন কাটিয়ে যাই।

নিকুঞ্জবাবুর এই সেজোকাকা–নাম নিবারণ বাঁড়ুজ্যে–মাঝে-মাঝে ভাইপোর কাছে এসে কটা দিন থেকে যান। নিকুঞ্জবাবুর বাবা অনেকদিন আগেই মারা গেছেন, তিন কাকার মধ্যে একমাত্র ইনিই অবশিষ্ট। খিটখিটে মেজাজের মানুষ, শোনা যায় ওকালতি করে অনেক পয়সা করেছেন, তবে বাইরের হালচালে তা বোঝার কোনও উপায় নেই। আসলে ভদ্রলোক বেজায় কঞ্জুষ।

কাকা, এসেই যখন পড়েছেন তখন থাকবেন বইকী, বললেন নিকুঞ্জবাবু, কিন্তু একটা ব্যাপার। গোড়াতেই আপনাকে জানিয়ে দেওয়া দরকার। আমার একটি যান্ত্রিক চাকর হয়েছে। আজকাল কলকাতায় কয়েকটা রোবট কোম্পানি হয়েছে জানেন তো?

তা তো জানি, বলেন নিবারণ বাঁড়ুজ্যে, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখেছি বটে! কিন্তু চাকরের জাতটা কী শুনি। আমার আবার ওদিকে একটু কড়াকড়ি জানোই তো। এ কি রান্নাও করে নাকি?

না না না, আশ্বাস দিলেন নিকুঞ্জবাবু। রান্নার জন্য আমার সেই পুরনো বৈকুণ্ঠই আছে। কাজেই আপনার কোনও ভাবনা নেই। আর ইয়ে, এই চাকরের নাম অনুকূল, আর একে তুমি বলে সম্বোধন করতে হয়। তুইটা ও পছন্দ করে না।

পছন্দ করে না?

না।

ওর পছন্দ-অপছন্দ মেনে চলতে হবে বুঝি আমাকে?

শুধু আপনাকে না, সকলকেই। তবে ওর কাজে কোনও ত্রুটি পাবেন না।

তা তুই এই ফ্যাসাদের মধ্যে আবার যেতে গেলি কেন?

বললাম তো–ও কাজ খুব ভাল করে।

তা হলে একবার ডাক তোর চাকরকে; আলাপটা অন্তত সেরে নিই।

নিকুঞ্জবাবু ডাক দিতেই অনুকূল এসে দাঁড়াল। ইনি আমার সেজোকাকা, বললেন নিকুঞ্জবাবু, এখন আমাদের বাড়িতে কিছুদিন থাকবেন।

যে আজ্ঞে।

ও বাবা, এ তো দেখি পরিষ্কার বাংলা বলে, বললেন নিবারণ বাঁড়জ্যে। তা বাপু দাও তো দেখি আমার জন্য একটু গরম জল করে। চান করব। বাদলা করে হঠাৎ কেমন জানি একটু ঠাণ্ডা পড়েছে, তবে আমার আবার দু বেলা স্নান না করলে চলে না–সারা বছর।

যে আজ্ঞে।

অনুকূল ঘর থেকে চলে গেল আজ্ঞাপালন করতে।

নিবারণবাবু এলেন বটে, কিন্তু নিকুঞ্জবাবুর অবস্থার কোনও উন্নতি হল না। মাঝখান থেকে সান্ধ্য আড্ডাটি ভেঙে গেল। একে তো খুডোর সামনে জুয়াখেলা চলে না, তার উপর নিকুঞ্জবাবুর সে সংস্থানও নেই।

এদিকে কাকা কতদিন থাকবেন তা জানা নেই। তিনি মর্জিমাফিক আসেন, মর্জিমাফিক চলে যান। এবার তাঁর হাবভাবে মনে হয় না তিনি সহজে এখান থেকে নড়ছেন। তার একটা কারণ এই যে, অনুকূল সম্বন্ধে তাঁর একটা অদ্ভুত মনোভাব গড়ে উঠেছে। তিনি এই যান্ত্রিক ভৃত্যটি সম্পর্কে যুগপৎ আকর্ষণ ও বিকর্ষণ অনুভব করছেন। চাকর যে ভাল কাজ করে, সেটা তিনি কোনওমতেই অস্বীকার করতে পারেন না, কিন্তু চাকরের প্রতি ব্যবহারে এতটা সতর্কতা অবলম্বন করাটাও তিনি মোটেই বরদাস্ত করতে পারছেন না। একদিন ভাইপোকে বলেই ফেললেন, নিকুঞ্জ, তোর এই চাকরকে নিয়ে কিন্তু মাঝে-মাঝে আমার খুব মুশকিল হচ্ছে।

কেন কাকা? নিকুঞ্জবাবু ব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করলেন।

সেদিন সকালে গীতার একটা শ্লোক আওড়াচ্ছিলাম, ও ব্যাটা আমার ভুল ধরে দিলে। ভুল যদি হয়েই থাকে, সেটা সংশোধন করা কি চাকরের কাজ? ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না কি? ইচ্ছা করছিল ওর গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিই, কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম।

ওই থাপ্পড়টা কখনও মারবেন না কাকা–ওতে ফল খুব গুরুতর হতে পারে। ওর ওপর হাত তোলা একেবারে বারণ। আপনি তার চেয়ে বরং ও কাছাকাছি থাকলে গীতা-টিতা আওড়াবেন না। সবচেয়ে ভাল হয় একেবারে চুপ থাকলে।

নিবারণবাবু গজগজ করতে লাগলেন।

এদিকে নিকুঞ্জবাবুর অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। অনুকূলের জন্য মাসে দু হাজার করে দিতে এখন ওঁর বেশ কষ্টই হচ্ছে। একদিন অনুকূলকে ডেকে কথাটা বলেই ফেললেন।

অনুকূল, আমার ব্যবসায় বড় মন্দা চলেছে।

সে আমি জানি।

তা তো জানো, কিন্তু তোমাকে আমি আর কদ্দিন রাখতে পারব জানি না। অথচ তোমার উপর আমার একটা মায়া পড়ে গেছে।

আমাকে একটু ভাবতে দিন এই নিয়ে।

কী নিয়ে?

আপনার অবস্থার যদি কিছু উন্নতি করা যায়।

সে কি তুমি ভেবে কিছু করতে পারবে? ব্যবসাটা তো আর তোমার লাইনের ব্যাপার নয়।

তবু দেখি না ভেবে কিছু করা যায় কি না।

তা দেখো। কিন্তু সেরকম বুঝলে তোমাকে আবার ফেরত দিয়ে আসতে হবে। এই কথাটা তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে রাখলাম।

যে আজ্ঞে।

দুমাস কেটে গেল। আজ আষাঢ় মাসের রবিবার। নিকুঞ্জবাবু বুঝতে পারছেন, টেনেটুনে আর দুটো মাস তিনি অনুকুলের ভাড়া দিতে পারবেন। তারপর তাঁকে মানুষ চাকরের খোঁজ করতে হবে। সত্যি বলতে কি, খোঁজ তিনি এখনই আরম্ভ করে দিয়েছেন। ব্যাপারটা তাঁর মোটেই ভাল লাগছে না। তার উপর আবার সকাল থেকে বৃষ্টি, তাই মেজাজ আরও খারাপ।

খবরের কাগজটা পাশে রেখে অনুকূলকে ডাকতে যাবেন এক পেয়ালা চায়ের জন্য, এমন সময় অনুকূল নিজেই এসে হাজির।

কী অনুকূল, কী ব্যাপার?

আজ্ঞে, একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।

কী হল?

নিবারণবাবু জানলার ধারে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের একটা বর্ষার গান করছিলেন, এমন সময় কথার ভুল করে ফেলেন। আমি ঘর ঝাঁট দিচ্ছিলাম, বাধ্য হয়ে ওঁকে সংশোধন করতে হয়। তাতে উনি আমার উপর খেপে গিয়ে আমাকে একটা চড় মারেন। ফলে আমাকে প্রতিশোধ নিতে হয়।

প্রতিশোধ?

আজ্ঞে হ্যাঁ। একটা হাইভোল্টেজ শক ওঁকে দিতে হয় ওঁর নাভিতে।

তার মানে–?

উনি আর বেঁচে নেই। অবিশ্যি যেই সময় আমি শল্টা দিই, সেই সময় কাছেই একটা জোরে বাজ পড়েছিল।

হ্যাঁ, আমি শুনেছিলাম।

কাজেই মৃত্যুর আসল কারণটা কী, সেটা আপনার বলার দরকার নেই।

কিন্তু—

আপনি চিন্তা করবেন না। এতে আপনার মঙ্গলই হবে।

আর হলও তাই। এই ঘটনার দুদিন পরেই উকিল ভাস্কর বোস নিকুঞ্জবাবুকে ফোন করে জানালেন যে, নিবারণবাবু তাঁর সম্পত্তি উইল করে রেখে গিয়েছেন তাঁর ভাইপোর নামে। সম্পত্তির পরিমাণ হল সাড়ে এগারো লক্ষ টাকা।

আনন্দমেলা, অগ্রহায়ণ ১৩৯৩ (২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৬)

No comments