বাদশাহ আকবর ও বীরবলের মজার ঘটনা
একবার দিল্লির দরবারে এক পণ্ডিত বাদশাহ আকবরকে বললেন, ‘জাঁহাপনা, আমি বিভিন্ন রাজ্যের পণ্ডিতদের তর্কশাস্ত্রে পরাজিত করে নিরানব্বইটি সোনার পদক লাভ করেছি! এখন আপনার দরবারের পণ্ডিতদের কাছে তিনটি প্রশ্ন করব। যদি কেউ এগুলোর যথার্থ উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে মাত্র একটি সোনার পদক দাবি করব।
সেটাই হবে আমার একশতম পদক। আর যদি আপনার সভাসদদের মধ্যে কেউ প্রশ্ন তিনটির উত্তর দিতে পারেন তাহলে আমি আমার নিরানব্বইটি পদকই তাকে দিয়ে দিব।’
এই প্রস্তাবে বাদশাহ রাজি হলেন। এবার পণ্ডিত একে একে প্রশ্ন তিনটি উত্থাপন করলেন। তার প্রথম প্রশ্ন, স্বপ্নে আমি একজন স্ত্রীলোককে দেখেছিলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে কে? সে বলল, ‘আমি বুদ্ধি’। কোথায় থাক? তার উত্তর “মগজে থাকি।” এখন আপনাদের মধ্যে কেউ কি বলতে পারেন, মগজ থেকে বুদ্ধি বেরিয়ে যায় কার?
আমার দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো : ‘আমি একটি মেয়েকে স্বপ্নে দেখলাম। তার নাম জিজ্ঞেস করে জানলাম ‘শক্তি’। কোথায় থাকে জিজ্ঞেস করতে বলল, “বাহু আর শরীরে আমার স্থান।” এখন আপনারা কি বলতে পারবেন, বাহু আর শরীর থেকে শক্তি চলে যায় কার?
সভাসদরা কেউই পণ্ডিতের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না। আকবর বাদশাহ এইসব প্রশ্ন শুনে নিজেও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। সত্যি সত্যি কি কেউই এর জবাব দিতে পারবে না?
এবার পণ্ডিত তার তৃতীয় প্রশ্নটি বলার জন্য মুখ খুললেন। বললেন, আমি আর একটি মেয়েকে দেখলাম। তার নাম জিজ্ঞেস করতে সে বলল, ‘হিম্মত’। সে কোথায় থাকে জিজ্ঞেস করাতে বলল, “হৃদয়ে থাকি!” এবার আপনারা বলুন হৃদয় থেকে হিম্মত চলে যায় কি?
যখন কেউ উত্তর দিতে পারল না, তখন বীরবল উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘প্রথম প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- সবসময় যারা স্বপ্নজাল বোনে তাদের বুদ্ধি মগজ থেকে বেরিয়ে যায়।’ দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর- মানুষ যখন বৃদ্ধ হয় তখন তার বাহু আর শরীর থেকে শক্তি চলে যায়।’ তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর—‘মানুষ যখন ভীরু কাপুরুষ হয়ে পড়ে তখন তার হিম্মত হৃদয় থেকে চলে যায়।’
বীরবলের বুদ্ধিদীপ্ত জবাব শুনে পণ্ডিত লজ্জায় লাল হয়ে পরাজয় স্বীকার করে নিলেন। সেইসঙ্গে প্রতিজ্ঞা করলেন, আর কখনও কোথাও জ্ঞানের বড়াই করবেন না। অঙ্গীকার অনুযায়ী বীরবলকে তিনি তাঁর নিরানব্বইটি পদকই দিতে গেলেন। কিন্তু বীরবল তা গ্রহণ না করে উদারতার পরিচয় দিলেন। বাদশাহকে অনুরোধ করে আর একটি পদকও জোগাড় করে দেন তিনি।
Post a Comment