যায়খানা – কাজী নজরুল ইসলাম


কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু একজন বিদ্রোহী কবিই ছিলেন না। ছিলেন না কেবল রুদ্রের কণ্ঠস্বর। তিনি তাঁর কাব্যকলায় যে শিল্পীত কারুকাজ করে গেছেন শিল্পবোদ্ধা সমালোচক ও নন্দনতাত্ত্বিকদের কাছে তার মণিরত্নময় রূপ এখন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। তাঁর সমকালে কেউ কেউ এমনকি রসজ্ঞ সমালোচকেরাও তাঁকে হুজুগের কবি’, কালের সাময়িক ভাষ্যকার বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

একমাত্র রবীন্দ্রনাথই খুব জোর দিয়ে বলেছিলেন, নজরুল শুধু কালের নন–কালোত্তর, চিরকেলে কবি, মহাকবি। বাস্তবে বিশ্বকবির সেই নজরুল-মূল্যায়নই টিকে গেছে।

যাহোক, নজরুলকে তাঁর কবিতায় সবটা বোঝা যায় না। জীবনেও তিনি ছিলেন প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর—বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। উচ্ছাসে, উল্লাসে, ছাদ ফাটানো হাসিতে নজরুলের তুলনা ছিলেন একমাত্র নজরুলই।

প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনা, উইট, হিউমার, ব্যঙ্গ বিদ্রুপে তিনি ছিলেন একমেবাদ্বিতীয়ম। সংবাদপত্রের এবং আলোকচিত্রের হেডিং ও ক্যাপশন লেখায় নজরুলের বুদ্ধির ঝলক ও রঙ্গরসিকতার ধার মানুষকে মুগ্ধ, অভিভূত করত। এমন সরস, প্রাণবন্ত, তীক্ষ্ণ ও তির্যক ঠাট্টা, রসিকতা, খুব কম লোকই করতে পারত। এতে তাঁর প্রতিভার একটা ভিন্নমাত্রিকতা প্রস্ফুটিত হতো। কোন ব্যক্তি যদি নজরুল জীবনের এইসব অলিখিত দিক রেকর্ড করে রাখত তাহলে তা নজরুল জীবনের অন্য একটা দিক উন্মোচন করত। আমরা নজরুলের এ ধরনের রসিকতার একটি গল্প আজ উপস্থাপন করছি।

আড্ডাবাজ দিলখোলা হাসির নজরুল একদিন এক সাহিত্য পত্রিকা অফিসে বসে তুমুল আড্ডা দিচ্ছিলেন। একেবারে নরকগুলজার করা আড্ডা; যে আড্ডায় পরচর্চাও শিল্পিত রূপ পায়। সেদিনের আড্ডায় নজরুল-বন্ধুদের কেউ একজন বলেছিলেন ‘পায়খানা’ শব্দটি।

নজরুল তাৎক্ষণিকভাবে বললেন :না, না ওই শব্দটি দিয়ে যা বোঝাতে চাওয়া হয়েছে তা একদম ঠিক হয়নি। কারণ, ওই ঘরে গেলে কেউ ‘খানা পায়না’। আবার হাতের বদলে ‘পা’-য়ে খানা নিয়েও কেউ দাঁড়িয়ে থাকে না। আসলে ওই ছোটঘরের নাম হওয়া উচিত ছিলো : ‘যায়খানা’।

No comments