নীল হাতী - হুমায়ূন আহমেদ


নীলুর যে মামা আমেরিকা থাকেন তাকে সে কখনো দেখেনি। নীলুর জন্মের আগেই তিনি চলে গিয়েছিলেন। আর ফেরেননি। নীলুর এই মামার কথা বাসার সবাই বলাবলি করে। মা প্রায়ই বলেন, আহ্‌, সঞ্জুটা একবার যদি দেশে আসত! কিন্তু নীলুর সেই মামা নাকি আর দেশে ফিরবেন না। কোনোদিন না। একবার নানিজানের খুব অসুখ হল। টেলিগ্রাম করা হল সঞ্জু মামাকে। সবাই ভাবল এবার বুঝি আসবে। তাও আসল না। নীলুর বাবা গম্ভীর হয়ে বললেন, মেমসাহেব বিয়ে করে ফেলেছে, এখন কি আর আসবে?

নীলুর খুব ইচ্ছে করে সেই মামাকে আর তার মেমসাহেব বৌকে দেখতে। কিন্তু তার ইচ্ছে হলেই তো হবে না। মামা তো আর ফিরবেই না দেশে। কাজেই অনেক ভেবেটেবে নীলু এক কাণ্ড করল। চিঠি লিখে ফেলল মামাকে। চিঠিতে বড় বড় করে লিখল-

মামা,
আপনি কেমন আছেন? আমার নাম নীলু। আপনাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে। আর মেমসাহেব মামিকে দেখতে ইচ্ছে করে।

ইতি
নীলু।

সেই চিঠির উল্টোপিঠে সে আকল পাখি আর সূর্যের ছবি। আর আকল মস্ত বড় নদী সেই নদীতে পাল তুলে নৌকা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ভারি সুন্দর হল ছবিটা। নীলু ভাবল, এইবার মামা নিশ্চয়ই আসবে। মামা কিন্তু আসল না। একদিন, দু’দিন হয়ে গেল। তবু না। মামা চিঠির জবাব পর্যন্ত দিল না। অপেক্ষা করতে করতে নীলু ভুলেই গেল যে, সে মামাকে চিঠি লিখেছিল। তার পরেই এক কাণ্ড।

সেদিন নীলুর খুব দাতব্যথা। সে স্কুলে যায়নি। গলায় মাফলার জড়িয়ে একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে বাইরে। এমন সময় ভিজতে ভিজতে পিয়ন এসে হাজির।

এই বাড়িতে নীলু নামে কেউ থাকে?
নীলু আশ্চর্য হয়ে বলল-
‘হ্যা। আমার নাম নীলু।’

পিয়নটি গন্ভীর হয়ে বলল, নিচে নেমে এসো খুকি। তোমার জন্যে আমেরিকা থেকে কে-একজন একটা উপহার পাঠিয়েছে। নাম সই করে নিয়ে যাও। নাম লিখতে পার খুকি?

হ্যা, পারি।

নীলু উপহারের প্যাকেটটি খুব সাবধানে খুলল। পিয়ন তখনও যায়নি, পাশে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে। প্যাকেটের ভেতর থেকে বেরুল নীল রঙের একটা হাতি। গলায় রুপোর ঘণ্টা বাজছে টুনটুন করে। হাতির শুড় আপনা থেকেই দুলছে। মাঝে মাঝে আবার কান নাড়াচ্ছে।

এত সুন্দর হাতি নীলু এর আগে আর কখনও দেখেনি। শুধু নীলু নয়, তার আব্বাও এত সুন্দর হাতি দেখেনি। অফিস থেকে ফিরেই তিনি দেখলেন তীর টেবিলে নীল হাতি শুড় দোলাচ্ছে। তিনি অবাক হয়ে বললেন, আরে, কে আনল এটা? বড় সুন্দর তো!

নীলু বলল, ‘সঞ্জু মামা পাঠিয়েছেন। দেখেন আব্বা, আপনা-আপনি ঘণ্টা বাজে।’
‘তাইতো, তাই তো!’

নীলুর মা নিজেও এত সুন্দর হাতি দেখেননি। তিনি কতবার যে বললেন- চাবি ছাড়াই শুড় দোলায় কী করে? ভারি অদ্ভুত তো! নিশ্চয়ই খুব দামি জিনিস।

সন্ধ্যাবেলা নীলুর স্যার এলেন পড়াতে। মা বললেন- পড়তে যাও নীলু আর হাতি শো-কেসে তালাবদ্ধ করে রাখো। নয়তো আবার ভেঙে ফেলবে।

মার যে কথা, এত সুন্দর জিনিস বুঝি শো-কেসে তুলে রাখবে? হাতি থাকবে তার নিজের কাছে। রাতে নীলুর পাশের বালিশে ঘুম পাড়িয়ে রাখবে। অনেক রাতে যদি তার ঘুম ভাঙে তা হলে সে খেলবে হাতির সঙ্গে।

মা কিন্তু সত্যি সত্যি শো-কেসে হাতি তালাবদ্ধ করে রাখলেন। নীলুকে বললেন, সবসময় এটা হাতে করে রাখবার দরকার কী? যখন বন্ধুবান্ধব আসবে তখন বের করে দেখাবে। এখন যাও স্যারের কাছে পড়তে।

নীলু কাদোকাদো হয়ে বলল, ‘স্যারকে দেখাতে নিয়ে যাই মা?’

উহু, পড়া শেষ করে স্যারকে দেখাবে। এখন যাও বই নিয়ে। হাতিকে রেখে যেতে নীলুর যে কী খারাপ লাগছিল!তার চোখ ছলছল করতে লাগল। একবার ইচ্ছে করল কেঁদে ফেলবে। কিন্তু বড় মেয়েদের তো কাঁদতে নেই, তাই কাঁদল না।
অনেকক্ষণ স্যার পড়ালেন নীলুকে। যখন তার যাবার সময় হল তখন নীলু বলল- ‘স্যার একটা জিনিস দেখবেন?’

‘কী জিনিস?’

‘একটা নীল হাতি? আমার মামা পাঠিয়েছেন আমেরিকা থেকে।’
‘কোথায় দেখি!’

নীলু স্যাকে বসবার ঘরে দিয়ে এল। তিনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন। শেষে বললেন, ‘এত সুন্দর!’
‘জি স্যার, খুব সুন্দর। গলার ঘণ্টাটা রুপোর তৈরি।’
‘তা-ই নাকি!’

‘জি।’

স্যার চলে যাবার পরও নীলু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল শো-কেসের সামনে। মা যখন ভাত খেতে ডাকলেন, তখন আবার বলল- ‘দাও না মা শুধু আজ রাতের জন্যে।’

‘না নীলু। শুধু বিরক্ত কর তুমি।’

নীলুর এত মন খারাপ হল যে, ঘুমুতে গিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদল একা একা। আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চমৎকার একটা স্বপ্ন দেখল।
যেন একটা বিরাট বড় বন। সেই বনে অসংখ্য পশুপাখি। নীলু তাদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটুও ভয় করছে না। তার নীল হাতিও আছে তার সঙ্গে। টুনটুন ঝুনঝুন করে তার গলায় রুপোর ঘন্টা বাজছে। বানর সব পশুপাখি অবাক হয়ে দেখছে তাদের। একটি সিংহ জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কে ভাই?’

নীলু বলল, ‘আমি এই বনের রানী। আমার নাম নীলাঞ্জনা। আর এই নীল হাতি আমার বন্ধু।’
পরদিন স্কুল থেকে নীলুর বন্ধুরা আসল হাতি দেখতে। শায়লা, বিনু, আভা সবাই শুধু হাতির গায়ে হাত বুলোতে চায়।
বিনু বলল, ‘এত সুন্দর হাতি শুধু আমেরিকায় পাওয়া যায়, তাই না নীলু?’
নীলু গন্তীর হয়ে বলল, হ্যা।

শায়লার বড় ভাই থাকেন জাপানে। সে বলল, জাপানে পাওয়া গেলে আমার বড় ভাই নিশ্চয়ই পাঠাত।
আভা বলল, ‘হাতিটাকে একটু কোলে নেব নীলু, তোমার মা বকবে না তো?’
‘না, বকবে না। নাও।’

সবাই একে একে অনেকক্ষণ করে কোলে রাখল হাতি। আর হাতিটাও খুব শুড় দোলাতে লাগল, কান নাড়তে লাগল। ঝুনঝুন টুনটুন করে ঘণ্টা বাজাতে লাগল।

হাতি দেখতে শুধু যে নীলুর বন্ধুরাই আসল, তাই নয়। নীলুর বড় খালা আসলেন, চাচারা আসলেন। আম্মার এক বান্ধবীও এসে হাতি দেখে গেলেন। নীলু স্কুলে গেলে অন্য ক্লাসের মেয়েরা এসে জিজ্ঞেস করে, তোমার নাকি ভাই খুব চমৎকার একটা নীল হাতি আছে?

কিন্তু ঠিক দু’দিনের দিন সব ওলটপালট হয়ে গেল। সেদিন নীলুর মা’র এক বান্ধবী এসেছেন বেড়াতে। তার সঙ্গে এসেছে তার ছোট্ট ছেলে টিটো। এসেই ছেলেটা ট্যা ট্যা করে কান্না জুড়ে দিল। কিছুতেই কান্না থামে না। নীলুর মা বললেন, যাও তো নীলু, টিটোকে তোমার ছবির বই দেখাও। নীলু ছবির বই আনতেই সে একটানে ছবির বইএর পাতা ছিড়ে ফেলল। এমন পাজি ছেলে!

নীলুর মা বললেন, ‘মিষ্টি খাবে টিটো? চমচম খাবে?’
‘না।’
‘শরবত খাবে?’
‘উহু।’

এমন কাঁদুনে ছেলে নীলু সারা জীবনেও দেখেনি। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে আবার গলা ছেড়ে কেঁদে ওঠে। শেষে নীলুর মা বললেন, হাতি দেখবে টিটো? দেখো কী সুন্দর একটা হাতি!

ওমা কী কাণ্ড! হাতি দেখেই কান্না থেমে গেল বাবুর। তখন তার সে কী হাসির ঘটা! নীলুর ভয় ভয় করতে লাগল যদি হাত থেকে ফেলে ভেঙে দেয়! একবার ইচ্ছে হল বলে, এত শক্ত করে ধরে না টিটো। টেবিলের উপর রেখে দেখো। এত শক্ত করে চেপে ধরলে ভেঙে যাবে যে!

কিন্তু নীলু কিছু বলল না। মেহমানরা অনেকক্ষণ থাকলেন। চা খেলেন, টি.ভি. দেখলেন। আর টিটো সারাক্ষণ হাতি নিয়ে খেলতে লাগল। যখন তাদের যাবার সময় হল তখন টিটো গন্তীর হয়ে বলল, এই হাতিটা আমি নেব।

ধড়াস করে উঠল নীলুর বুক। টিটোর মা বললেন, ছি! টিটো, এটা তো নীলুর!

হোক নীলুর, আমি নেব। এই বলেই সে আকাশ ফাটিয়ে কাঁদতে শুরু করল। কিছুতেই কান্না থামানো যায় না। নীলুর মা বললেন, টিটো, হাতিটা নীলুর খুব আদরের। তুমি এই জিরাফটা নাও। দেখো, কী চমৎকার লম্বা গলা জিরাফের!

টিটো জিরাফের দিকে ফিরেও তাকাল না। হাতিটাকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে আকাশ ফাটিয়ে চেঁচাতে লাগল।

নীলুর মনে হল তার গলার কাছে শক্ত একটা কী যেন জমাট বেঁধে আছে। সে যেন কেঁদে ফেলবে তক্ষুনি। নীলু দৌড়ে চলে গেল ছাদে। ছাদে একা একা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি আমার নীল হাতি কিছুতেই দেব না, কিছুতেই দেব না।

অনেক-পরে মা এসে নীলুকে ছাদ থেকে নামিয়ে নিয়ে গেলেন। শান্ত স্বরে বললেন, এত সামান্য জিনিস নিয়ে এত কাঁদতে আছে নীলু? ছি! খেলনা কি কোনো বড় জিনিস নাকি?

নীলু বলল, টিটো কি আমার হাতি নিয়ে গেছে?

নীলুর মা চুপ করে রইলেন। নীলু বসবার ঘরে এসে দেখে শো-কেসের যে-জায়গায় দাড়িয়ে নীল হাতি শুঁড় দোলাত সেখানে কিছু নেই।

নীলু বলল, ‘টিটো আমার হাতি নিয়ে গেছে মা?’
নীলুর মা বললেন, তোমার মামাকে চিঠি লিখব, দেখবে এরচে অনেক সুন্দর আরেকটা হাতি পাঠাবে। নীলু কথা বলল না।
রাতের বেলা অল্প চারটা ভাত মুখে দিয়েই উঠে পড়ল নীলু। বাবা বললেন, ‘ভাত খেলে না যে মা?’
‘খিদে নেই বাবা।’

‘গল্পের বই কিনবে? চলো, বই কিনে দিই।’
‘চাই না গল্পের বই।’

‘লাল জুতো কিনতে চেয়েছিলে, চলো, কিনে দেব।’
‘আমার কিচ্ছু চাই না বাবা।’ নীলু ফুঁপিয়ে কেদে উঠল।

সেই রাতে খুব জোছনা হয়েছে। ছোট চাচা ছাদে মাদুর পেতে শুয়েছেন। ছোট্ট নীলুও তার ছোট্ট বালিশ এনে শুয়েছে তার চাচার পাশে। চাচা নীলুর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, ‘হাতিটার জন্যে তোমার খুব খারাপ লাগছে, মা?’
‘হ্যা।’

‘আমারও লাগছে। টিটোর শখ মিটে গেলে আমরা এ হাতি নিয়ে আসব, কেমন?’
নীলু চুপ করে রইল।

ছোট চাচা বললেন, ‘গল্প শুনবে মা?’
‘বল।’

‘কিসের গল্প শুনবে?’
নীলু মৃদু স্বরে বলল, ‘হাতির গল্প।’
ছোট চাচা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে গল্প শুরু করলেন।
আমাদের গ্রামের বাড়ি হিরণপুরে রহিম শেখ নামে একজন খুব ধনী লোক ছিলেন। তাঁর একটি মাদি হাতি ছিল।
‘সত্যিকারের হাতি চাচা?’

‘হ্যা, মা। প্রকাণ্ড হাতি। রহিম শেখ খুব ভালোবাসত হাতিটাকে। ঠিক তোমার মতো ভালোবাসত।’
‘সেই হাতিটার গায়ের রং কি নীল?’

‘না মা, মেটে রঙের হাতি ছিল সেটি। তারপর একদিন হঠাৎ করে হাতিটা পালিয়ে গেল গারো পাহাড়ে। চার বছর আর কোনো খবর পাওয়া গেল না। রহিম শেখ কত জায়গায় যে খোজ করল! কোনো খবর নেই। হাতির শোকে অস্থির হয়ে গিয়েছিল সে। রাতে ঘুমাত না। শুধু বলত, ‘আমার হাতি যদি রাতে ফিরে আসে?’

তারপর এক রাতে খুব ঝড়বৃষ্টি শুরু হল। বাতাসের গর্জনে কান পাতা দায়। এমন সময় রহিম শেখ শুনল, কে যেন তার ঘরের দরজা ঠেলছে।

রহিম শেখ চেঁচিয়ে বলল, ‘কে? ওমনি ঝড়ের গর্জন ছাপিয়ে হাতি ডেকে ওঠল। রহিম শেখ হতভম্ব হয়ে দেখল, চার বছর পর হাতি ফিরে এসেছে। তার সঙ্গে ছোট্ট একটা বাচ্চা। আশেপাশে গ্রামের কত লোক যে সেই হাতি দেখতে আসল!’
‘তুমি গিয়েছিলে?’

‘হ্যা মা, গিয়েছিলাম। হাতির বাচ্চাটা ভীষণ দুষ্ট ছিল। পুকুরে নেমে খুব ঝাঁপাঝাপি করত। দরজা খোলা পেলেই মানুষের ঘরে ঢুকে চাল-ডাল ফেলে একাকার করত। কিন্তু কেউ কিচ্ছু বলত না। সবাই তার নাম দিয়েছিল ‘পাগলা মিয়া’।

গল্প শুনে নীলুর চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। সে ফিসফিস করে বলল, ‘সত্যিকার হাতি হলে আমারটাও ফিরে আসত। তাই না চাচা?’

‘হ্যা, নিশ্চয়ই আসত। অনেক রাত হয়েছে। ঘুমুতে যাও, মা।’

নীলুর কিন্তু ঘুম আসল না। বাইরে জোছনার ফিনকি ফুটছে। বাগানে হাসনাহানার গাছ থেকে ভেসে আসছে ফুলের গন্ধ। নীলুর মন কেমন করতে লাগল। ক্রমে ক্রমে অনেক রাত হল। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে গেলে সারা বাড়ি নিশ্চুপ হয়ে গেল। নীলু কিন্তু জেগেই রইল। তারপর সেই আশ্চর্য ঘটনাটি ঘটল নীলু শুনতে পেল নিচের বাগানে টুনটুন ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছে। রহিম শেখের হাতির মতো তার হাতিটাও ফিরে এসেছে নাকি? হাতির গলার ঘণ্টার শব্দ বলেই তো মনে হয়! জানালা দিয়ে কিছু দেখা যায় না। নীলু কি তার মাকে ডেকে তুলবে? কিন্তু মা যদি রাগ করেন? নীলু হয়তো ভুল শুনছে কানে। হয়তো একটা ঘণ্টার শব্দ নয়। ভুল হবার কথাও তো নয়। চারদিক চুপচাপ। এর মধ্যে পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে টুনটুন ঝুনঝুন শব্দ।

নীলু পা টিপে টিপে নিচে নেমে এল। দরজার উপরের ছিটকিনি লাগান। সে চেয়ার এনে তার উপর দাঁড়িয়ে খুলে ফেলল দরজা। তার ভয় করছিল। তবু সে নেমে গেল বাগানে। আর নেমেই হতভম্ব হয়ে দেখল তার নীল হাতি শুড় দুলিয়ে টুনটুন করে ঘণ্টা বাজিয়ে এগিয়ে আসছে তার দিকে। হাতিটি নীলুকে দেখেই পরিষ্কার মানুষের মতো গলায় বলে উঠল, ‘আমি এসেছি নীলু।’

অনেকক্ষণ নীলুর মুখে কোনো কথা ফুটল না। ‘হাতি বলল, আরে! আগেই আসতাম। পথঘাট চিনি না, তাই দেরি হল। তুমি খুশি হয়েছ তো, বন্ধু?’

নীলু গাঢ় স্বরে বলল, ‘হ্যা।’

‘আমিও খুশি হয়েছি। টিটো যখন আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি কেঁদেছি।’

নীলু হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে চুমু খেল তার বন্ধুকে। আনন্দে হাতি টুনটুন ঝুনঝুন করে অনবরত তার ঘণ্টা বাজাতে লাগল। নীলু গলা ফাটিয়ে ডাকল, মা, আমার নীল হাতি এসেছে।

দুপুররাতে জেগে উঠল বাড়ির লোকজন। বাবা বললেন, ‘মনে হয় হাতিটা ঐ ছেলেটির হাত থেকে বাগানে পড়ে গিয়েছিল।’
মা বললেন, ‘আচ্ছা সাহস তো মেয়ের! এত রাতে একা বাগানে এসেছে।’

নীলু মা’র কোলে মুখ গুঁজে বলল, ‘মা, আমার হাতি একা একা টিটোদের বাসা থেকে হেঁটে চলে এসেছে। আমাকে সে নিজে বলেছে।’

বাসার সবাই হেসে উঠল। বাবা বললেন, ‘ছি মা, আবার মিথ্যে কথা বলছ?’

কিন্তু বাবা তো জানেন না নীলু একটুও মিথ্যে বলেনি।

No comments