গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প সমগ্র


গোপাল ভাঁড় ছিলেন মধ্যযুগে নদিয়া অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত রম্য গল্পকার, ভাঁড় ও মনোরঞ্জনকারী। তাঁর আসল নাম গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়া জেলার প্রখ্যাত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় নিযুক্ত ছিলেন। রাজা তাঁকে তাঁর সভাসদদের মধ্যকার নবরত্নদের একজন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।

আজকের গল্পের আসরে গোপাল ভাঁড়ের  মজার গল্প সমগ্র নিয়ে সাজানো হয়েছে।

যেমন কর্ম তেমন ফল

গোপাল একাদশী করত। তার একাদশী করা অভ্যাস। গোপাল একাদশীর দিন সন্ধ্যাবেলায় প্রসাদ পেত লুচি, মিষ্টি- নানাবিধ ফল সহকারে। সেদিন যেন মহোৎসব লেগে যেত। গোপালকে ওভাবে একাদশীর দিন ভোজন করতে দেখে তার এক চাকর বলল-

চাকর : সামনের তারিখ থেকে আমিও একাদশী পালন করব বাবু। আমার একাদশী করার খুব ইচ্ছে। আপনি যদি আদেশ দেন আমি একাদশী করি। আমার খুব ইচ্ছা।

গোপাল : খুবই ভালো কথা, এই তো চাই। সকলেরই একাদশী করা উচিত। দেহের উপকার, তার সাথেই মনেরও সাত্ত্বিকভাব সাধনের জন্য একাদশী সকলের করা উচিত।

চাকর পরবর্তী একাদশীর তারিখে সকাল থেকে গোপালের সঙ্গে অভূক্ত রইল। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত গভীর হয় হয়, তখনো গোপাল ভোজন করছে না দেখে চাকরটি ধৈর্যহারা হয়ে জিজ্ঞাসা করল-

চাকর : বাবু প্রতি একাদশীতেই তো আপনি সূর্যাস্তের ঠিক পরেই প্রচুর ভালো-মন্দ ভোজন করে থাকেন, কিন্তু আজ এখনো কিছু খাচ্ছেন না কেন?

গোপাল : ওরে ব্যাটা, আজ যে যেমন তেমন একাদশী নয়, সাক্ষাৎ ভীম একাদশী- আজ একদম নিরম্বু উপবাস। আজকে জলও খেতে নাই। সেজন্য আজ আর কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করিনি।

গোপালের চাকর হায় হায় করতে লাগল। এমন হবে জানলে কী সে একাদশীর নাম মুখে আনতো। পেট যে চোঁ চোঁ করছে। সেই থেকে চাকর আর কোনো দিন একাদশীর কথা মুখে আনল না ভুলেও। গোপালও মুচকি হেসে মনে মনে বলল, ‘ব্যাটা আজ বেশ ভালো রকম জব্দ হয়েছে, আর কোনো দিন একাদশীর কথা মুখেও আনবে না। যেমন কর্ম তেমন ফল।’


টাকা পেয়েই গেলেন সুদ সমেত

গোপাল গ্রামের এক মহাজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল। আজ দেব, কাল দেব বলে সে টাকা আর শোধ করতে পারেনি। সেই লোক গোপালকে একদিন হাটের মধ্যে পাকড়াও করে বলল-

মহাজন : আমার টাকাগুলো দিয়ে দাও তো গোপাল, নইলে আজ আর তোমায় ছাড়ব না। তোমাকে এত লোকের সামনে অপমান করব, দেখি তুমি কোথা যাও বাছাধন।

মহাজনের দ্বারা অপমানিত হয়ে গোপাল বলল-
গোপাল : টাকা কি দেব না বলছি? আপনার টাকা আগামীকালই দিয়ে দেবো। পরশু সকালেই আমার বাড়িতে চলে আসুন। আমি টাকা শোধ করে দেব পরশুর মধ্যে। সামান্য টাকার জন্য এত অপমান করার আপনার দরকার ছিল না। আমি টাকা যেমন করে পারি, পরিশোধ করার ব্যবস্থা করবই।

গোপালের কথা শুনে মহাজন মনে মনে ভাবলেন গোপাল যখন এত লোকের সামনে কথা দিল তখন পরশুদিন যেভাবেই হোক টাকা পরিশোধ করবেই। এই ভেবে পরশু মহাজন গোপালের বাড়িতে গিয়ে হাজির হল।

মহাজন : কই হে গোপাল টাকা দেবে বলেছিলে দাও, আমি ঠিক সময় মত এসেছি।

মহাজনের ডাক শুনে গোপাল বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে বলল-
গোপাল : কাকভোরে ছুটে এসেছেন, দয়াকরে বাড়ির দাওয়ায় একটু বিশ্রাম করুন- আমি যত তাড়াতাড়ি পারি আপনার টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করছি। আপনি কষ্ট করে এসেছেন প্রাণের টানে তাতেই আমি কৃতার্থ। আমার বাড়ি আজ পবিত্র হল। মহাজন তো এখনই টাকা পাবে মনে মনে ভেবে নিশ্চিত হয়ে গোপালের বাড়ির দাওয়ায় বসে হাটু দোলাতে থাকল।

কিছুক্ষণ পরে গোপাল আর গোপালের বড় ছেলে সামনের খোলামেলা বেশ বড় বাগানে পাঁচ হাত অন্তর বেশ কয়েকটি নারকেল চারা পুঁততে লাগল মনোযোগ সহকারে। তা দেখে মহাজন গোপালকে অস্থির হয়ে বলল-

মহাজন : এ কি করছ গোপাল? আমার যে বেলা হয়ে যাচ্ছে। কাজকর্ম আছে যে। গদিতে যেতে হবে, সকালে উঠেই এসেছি জলখাবারও খাওয়া হয়নি। বাড়িতে লোকজন আসবে, শীঘ্র কর।

গোপাল নারকেলের চারা পুঁততে পুঁততে বলল-
গোপাল : দেখছেন তো চারা পুঁতছি। একটু বসুন না। এখনি হয়ে যাবে পোঁতা। আপনার টাকার ব্যবস্থা করে তবে আজ জলগ্রহণ করবো বলছি। এই দেখুন। করছি কিনা? আপনি আর একটু বসে নিজে দেখুন। আপনি অপেক্ষা করুন, হলো বলে। বিশ্বাস না হয় উঠে এসে দেখুন।

কাজ শেষ করে গোপাল কাছে এসে দাঁড়াতেই মহাজন জিজ্ঞেস করল-
মহাজন : সেই থেকে তো বসিয়ে রেখেছো- একটা তামাকও দিলে না, যাক কই টাকা দাও। আমার তাড়া আছে।
গোপাল মুচকি হেসে বলল-

গোপাল : এতক্ষণ ধরে তো আপনার টাকা শোধের ব্যবস্থাই করলুম মশায়।
মহাজন : তার মানে তুমি তো এখন নারকেলের চারা পুঁতলে। আমার টাকার ব্যবস্থা করলে কী করে?

গোপাল : এই যে নারকেলের চারা পুঁতলাম তাতে নারকেল গাছ হবে এবং এতগুলো নাকেল গাছে যা ফল হবে তা তো আর কম নয়। দু’বছরের নারকেলের টাকায় আপনার সব দায়-দেনা শোধ হয়ে যাবেই। আপনাকে যখন কথা দিয়েছি আজই টাকা শোধের ব্যবস্থা করব, তাই ব্যবস্থা করে দিলাম। দু’বছরের জন্য নারকেলের ইজারাও আপনাকে দিয়ে এলাম। আর ভাবছেন কেন, ধরুন আপনার টাকা বলতে গেলে নিশ্চিন্তে পেয়েই গেলেন সুদ সমেত।

গোপালের কথা শুনে পাওনাদার হাসবে না কাঁদবে ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত বেচারা হেসেই ফেলল। গোপাল বলল, ‘এখন কিনা টাকাটা নগদ পেয়ে গেলেন বলে হাসি আর ধরে না যে দাদার।’


কি বাবা চুরি করা হল

একদিন গোপালের জ্বর হওয়ায় সে সেদিন রাজসভায় যেতে পারেনি। মহারাজ সভাসদদের নিয়ে নানা আলাপ-আলোচনা করতে করতে হঠাৎ বললেন-
মহারাজ : আমার সভার মধ্যে এমন কি কেউ আছে, যে গোপালের ঘর থেকে কিছু চুরি করে আনতে পারে? যদি কেউ পারে, তবে সে সামান্য জিনিস হলেও আমি তাকে বিশেষভাবে পুরষ্কৃত করব। তোমরা কেউ রাজী থাকলে বল।

মহারাজের পুরস্কারের লোভেও কেউ রাজি হল না গোপালের ঘরে চুরি করতে। কারণ বড় চতুর সে। তার চোখে ধুলো দেয়া সহজ নয়। ধরা পড়লে নাকালের শেষ থাকবে না। নাকানি-চুবানি তো খেতে হবেই, আর সে তার প্রতিশোধ একদিন না একদিন নেবেই নেবে এবং অশেষ দুর্গতির সীমা থাকবে না।

ভূপাল নামে একটি লোক পুরস্কারের লোভে সেদিন মধ্যরাত্রে গোপালের বাড়িতে সিদ কেটে প্রবেশ করল। গোপাল আগে থেকেই রাজসভার কথা জানতে পেরেছিল, তাই সে লোভি লোকটাকে জব্দ করার জন্য তৈরি হয়ে রইল। গোপালের ঘরের দেওয়ালে সিদ। গোপাল পূর্বপ্রস্তুতি মতো একটা মানুষের বিষ্ঠাপূর্ণ কলসির উপরে গোটাকতক টাকা রেখে দিয়েছিল এবং সেখানে নিজে একপাশে আত্মগোপন করে দাঁড়িয়ে রইল।

লোকটি সিদ কেটে যখন ঘরের মধ্যে মাথা গলিয়ে ঢুকে দেখল যে, সামনেই একটা টাকাভর্তি কলস বসানো আছে। সে আর কালবিলম্ব না করে তাই মাথায় তুলে নিয়ে মনের আনন্দে রাজবাড়ির দিকে এগোতে থাকলো। কিছুদূর যেতেই গোপাল ঢিল ছুঁড়ে ব্রাহ্মণের মাথার কলসটা ভেঙে দিল। কলস চুরমার হয়ে সঙ্গে সঙ্গে লোকটির সারা শরীর বিষ্ঠাতে পূর্ণ হয়ে গেল।

তখন ভোর হয়েছে। গোপাল বেরিয়ে বলল, ‘কি বাবা চুরি করা হল।’

আলোটা জ্বেলে নিয়ে দেখলেই তো পারো
একদিন জরুরি দরকারের জন্য গোপালের খুব সকালে উঠেই রাজদরবারে যাবার কথা। সে স্ত্রীকে বলল- গোপাল : আমি ঘুমিয়ে পড়লে আমাকে ডেকে দিও খুব ভোরবেলা।

ভোর হয়নি। গোপালের ঘুম আগেই ভেঙে গেল। সে বলল-
গোপাল : দেখ তো, বাইরে সূর্য উঠল কিনা? আমাকে বেরুতে হবে তাড়াতাড়ি। রাজবাড়িতে ভীষণ দরকার।
স্ত্রী : ওমা, বাইরে যে অন্ধকার। কী দেখব?

গোপাল : অন্ধকারে দেখতে না পাও, আলোটা জ্বেলে নিয়ে দেখলেই তো পারো সূর্য উঠেছে কিনা।


একে বলে উটকো লোক

গোপাল একবার এক বড় মেলায় বেড়াতে গিয়েছিল। মেলায় গোপাল খোশ মেজাজে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এমন সময় একটা উটকো লোক এসে গোপালকে জড়িয়ে ধরলো-

উটকো লোক : আচ্ছা দাদা, কাশিতে মরলে লোক স্বর্গে যায় আর ব্যাসকাশীতে মরলে নাকি গাধা হয়। কিন্তু যারা কাশি ও ব্যাসকাশীর ঠিক মাঝখানে মরে, তারা কী হয়? আপনি বলতে পারেন দাদা আমার জানতে ইচ্ছে?

গোপাল : মশায়, তারা আপনার মতো উটকো হয়। কথা নেই বার্তা নাই চেনা নাই শোনা নাই… দুম করে জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন। একে বলে উটকো লোক।


কে বেশি পেটুক

গোপাল ভাঁড় বাড়িতে তাঁর কিছু বন্ধু এসেছেন। অতিথিদের তরমুজ দিয়ে আপ্যায়ন করলেন গোপাল । বন্ধুদের সঙ্গে খেতে বসলেন গোপাল নিজেও।

গোপাল ভাঁড় এর পাশেই বসেছিলেন তাঁর এক দুষ্টু বন্ধু। তরমুজ খেয়ে খেয়ে বন্ধুটি গোপাল এর সামনে তরমুজের খোসা রাখছিলেন। খাওয়া শেষে দেখা গেল গোপাল ভাঁড় এর সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ।

দুষ্টু বন্ধুটি অন্যদের বললেন, “দেখেছেন কাণ্ড? গোপাল ভাঁড় কেমন পেটুক? তার সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ হয়ে গেছে!”
গোপাল ভাঁড় হেসে বললেন, “আর আমার বন্ধুটির সামনে দেখছি একটা খোসাও নেই! উনি খোসাশুদ্ধ খেয়েছেন! এখন আপনারাই বলুন, কে বেশি পেটুক!”


পায়ে ব্যথা নিয়ে যাবো

একদিন এক প্রতিবেশী গোপাল ভাঁড়ের কাছে এসে-
প্রতিবেশী : আমাকে একটা চিঠি লিখে দাও।
গোপাল : আমি চিঠি লিখতে পারবো না, আমার পায়ে ব্যথা।

প্রতিবেশী : আশ্চর্য, চিঠি তো লিখবে হাত দিয়ে। পায়ে ব্যথা তাতে কী হয়েছে?
গোপাল : কারণ আমি অতোদূর হেঁটে যেতে পারবো না।

প্রতিবেশী : অতোদূর হাঁটতে পারবে না মানে?
গোপাল : মানে আমার লেখা চিঠি আমি ছাড়া আর কেউ পড়তে পারবে না। আমার হাতের লেখা খুব খারাপ তো। যাকে চিঠি পাঠাবে, তাকে তো আমাকেই পড়ে দিয়ে আসতে হবে, তাই না? পায়ে ব্যথা নিয়ে যাবো কীভাবে?


রামনাম জপলে ভূত ছাড়ে

একবার রাজামশাই শক্ত করে গোপাল ভাঁড়ের হাত আঁকড়ে ধরে বললেন, ‘কী গোপাল, বুদ্ধির জোরে কি আর সব হয়? মাঝে গায়ের জোরও লাগে। পারলে হাতখানা ছোটাও দেখি বাপু। দেখি, কেমন তোমার শক্তি।’

রাজা ভেবেছিলেন, গোপাল ভাঁড় হয়তো হাত ধরে টানাহেঁচড়া করবে, মোচড়ামুচড়ি করবে। রাজাকে অবাক করে দিয়ে সে এসবের কিছুই করল না! শুধু বিড়বিড় করে রাম রাম বলতে লাগল।

রাজামশাই : কী হলো, অত রাম রাম করছ কেন?
গোপাল : রাজা মশাই, গুরুজনের মুখে শুনেছি, রামনাম জপলে ভূত ছাড়ে! রাজা সঙ্গে সঙ্গে গোপালের হাত ছেড়ে দিলেন!


গোপালের বয়স হয়েছে

গোপালের তখন বয়স হয়েছে। চোখে ভালো দেখতে পারে না। একদিন পর রাজ দরবারে এলেন-
রাজা : কী গোপাল, গতকাল আসনি কেন?

গোপাল : আজ্ঞে চোখে সমস্যা হয়েছে। সবকিছু দুটো দেখি। কাল এসেছিলাম। এসে দেখি দুটো দরবার। কোনটায় ঢুকব, ভাবতে ভাবতেই।
রাজা : এ তো তোমার জন্য ভালোই হলো। তুমি বড়লোক হয়ে গেলে। আগে দেখতে তোমার একটা বলদ, এখন দেখবে দুটো বলদ।
গোপাল : ঠিকই বলেছেন মহারাজ। আগে দেখতাম আপনার দুটো পা, এখন দেখছি চারটা পা। ঠিক আমার বলদের মতোই।


গোপাল তামাক খায়

একদিন সকালে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার প্রাতঃভ্রমণে বের হলেন গোপাল ভাড়কে নিয়ে। গোপাল তামাক খাচ্ছিলো দেখে রাজা খুবই বিরক্ত হলেন। পথে দেখলেন, তামাক বাগানে একটা গাধা আগাছা খাচ্ছে, কিন্তু তামাক পাতায় মুখও দিচ্ছে না।

রাজা গোপালকে বললেন, ‘দেখেছো হে গোপাল, গাধা ঘাস খায় ঠিকই, কিন্তু তামাক মুখেও নেয় না।’ হেসে গোপাল বলে, ‘রাজামশাই ঠিকই বলেছেন। কেবল গাধারাই তামাক খায় না।’


এর পর তোমার পালা

ছোটবেলা গোপাল ভাঁড় কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে বুড়োরা তাকে ক্ষেপাত আর হাসত, ‘গোপাল, এর পর তোমার পালা।’
শুনে গোপালের খুব রাগ হত। বুড়োদের কিভাবে জব্দ করা যায়, সেই পথ খুঁজতে লাগল এবং এক সময় পেয়ে গেল।
শবদাহ আর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে গিয়ে ঐসব বুড়োদের বলতে লাগল, ‘এর পর তোমার পালা!’


দুধেল গাই কিনব বলেছি

গোপাল ভাঁড়ের ভাইপো আর তার স্ত্রীর মধ্যে ভীষণ ঝগড়া বেধেছে। মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে গেলেন গোপাল। বললেন, ‘বলি কী নিয়ে এত ঝগড়া হচ্ছে শুনি?’
গোপালের ভাইপো বলল, ‘দেখুন তো কাকা, আমি আগামী বছর একটা দুধেল গাই কিনব বলেছি। আর আমার স্ত্রী বলছে, সে নাকি গাইয়ের দুধ দিয়ে পায়েস রাঁধবে।’ ভাইপোর স্ত্রীও সমান তেজে চেঁচিয়ে উঠল।

দু হাত তুলে দুজনকে থামতে ইঙ্গিত করে বললেন গোপাল, ‘আস্তে আস্তে! গাধা নাকি তোরা?’
দুজন একটু ঠান্ডা হলে গোপাল ভাইপোকে বললেন, ‘আরে গাধা, তোর বউয়ের পায়েস রাঁধা তো পরের কথা। আমি যে বাড়ির পেছনে সবজির বাগান করেছি, সেসব যে তোর গরু খাবে, সে খেয়াল আছে?


গোপালের সূক্ষ্ম বিচার

লোক পরম্পরায় গোপালের সূক্ষ্ম বিচার বৃদ্ধি দেখে এক প্রতিবেশী তার মোকদ্দমা চালাবার জন্য গোপালকে অনুরোধ করে। কিন্তু গোপাল মোকদ্দমার কাহিনী শুনে বারবার না-না করা সত্ত্বেও প্রতিবেশী লোকটি নাছোড়বান্দা হওয়ায় বাধ্য হয়ে গোপাল প্রতিবেশীর মোকদ্দমাটি হাতে নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই মামলার হার হয়।

ভদ্রলোক কাঁদতে কাঁদতে বললে এ কি করলেন, আমার সব গেল। তখন গোপাল বলল, দেখুন ব্যারাম সেরে উঠতে উঠতেও লোক অনেক সময়ে হার্টফেল করে মারা যায়। তাকে ব্যারাম-মরা বলা যেতে পারে না। আপনার ব্যাপারটও ঠিক সেই রকম। মামলার বিচারে ‍আপনি হারেন নি। হাকিমেরা মূলত তিনটি বিষয়ের উপর বিবেচনা করে রায় দেয় সাধারণত‍‍- তিনটি বিষয় হল অনুমান, প্রমাণ এবং স্বীকারোক্তি।
অনুমানটাও আপনার স্বপক্ষে ছিল, অর্থাৎ যে-কেউ মামলার বিবরণ শুনলে বলতে বাধ্য ছিল যে বিবাদী দোষী। হাকিমও নিশ্চয়ই তাই ভেবেছেন। কিন্তু অনুমানের উপর নির্ভর করে তো আর রায় দেওয়া চলে না।

দ্বিতীয়তঃ হলো প্রমাণ। প্রমাণ করা এত শক্ত যে, ওর ভেতরে শেষ পর্যন্ত গলদ থেকেই যায়। আমি আপনার মামলা প্রমাণ করে ছেড়েছি, এ কথা যাকে জিজ্ঞাসা করবেন সেই বলবে, কিন্তু ঐ যে বললাম-গলদ রয়ে গেছে গোড়ায়। থাকতেই হবে গলদ! বিপক্ষের উকিল আমাদের সব অকাট্য প্রমাণগুলি মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

তৃতীয়তঃ বাকি রইল স্বীকারোক্তি। আসামী লোকটা যদি ভদ্রতা করে দোষ স্বীকার করে যেতো, তাহলে আর কোন কিছুতেই আটকাতো না আমাদের। কিন্তু তা সে কোনমতেই করলে না কিনা! তাতে আমি আর কি করতে পারি বলুন। মামলা জেতবার আগেই তো হার হলো। ব্যায়রাম থেকে সেরে উঠতে উঠতে হার্টফেল। এতে বলুন আমার কি দোষ আছে? কারণ এর বেশী আর ভদ্রলোককে কিছু বলতে পারেই না গোপাল।
ভদ্রলোক রেগেই চলে গেলেন।


মৃত্যু কাশীতে

গোপালের জ্যোতিষ চর্চার খ্যাতি শুনে দূর গ্রাম থেকে হাত দেখাতে এসেছেন এক ভদ্রলোক। গোপাল খুব ঘটা করে হাত -টাত দেখে বলে, ‘আপনি তো অতি ভাগ্যবান মশাই! হাতে স্পষ্ট দেখছি আপনার দেহাবসান হবে কাশীতে।’ পূণ্যস্থানে মৃত্যু হবে জেনে ভদ্রলোক খুব খুশি মনে ফিরে গেলেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই ভদ্রলোকের ছেলে এসে উপস্থিত। সে তেড়েফুঁড়ে গোপালকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি গননা করে বলেছিলেন বাবার মৃত্যু হবে কাশীতে। কই , উনি তো বাড়িতেই মারা গেলেন?’ গোপাল আমতা আমতা করে বলে, ‘আমি কি তাই বলেছি নাকি? আমি বলতে চেয়েছি উনি কাশতে কাশতে মারা যাবেন। তা সেটা ঠিক বলেছি কি – না? বলুন?’


বাঁদরের উৎপাত

গোপালকে বলছেন রামবাবু, ‘এখানে বাঁদরের বড্ড উৎপাত। তোমাকে তো দেখতে বেশ বাঁদরের মতোই ! ওদের দলে তোমাকে ছেড়ে দিলে কি হবে বলতো ? তুমি নিশ্চই কখনো বাঁদর দেখনি?’ ‘আজ্ঞে না! আপনার মত বাঁদর আমি আগে আর কক্ষনো দেখিনি!’ গোপালের সোজা -সাপ্টা উত্তর।


বিদ্যের জাহাজ

গোপালের সাথে এক ভদ্রলোকের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন রামবাবু , ‘বুঝলে গোপাল, ইনি হলেন শ্রী বিদ্যাচরণ মিশ্র। তোমার মতো অকাট মূর্খ নন , রীতিমত যাকে বলে বিদ্যের জাহাজ!’ ‘তা জাহাজই যখন ডাঙায় কেনো? সাগরের জলে ভাসিয়ে দিন না!’ গোপালের সরল উত্তর।


শীতের রাতেসারা রাত পুকুরে

গোপাল ভাঁড়ের গল্প চিরনবীন। কারণ বাঙালিজীবনে অসংগতি , পাগলামো, পরিমিতিবোধের অভাব, রঙ্গরসিকতা ইত্যাদি থাকবেই। আর গোপাল ভাঁড়ও তাই থাকবেন। গোপাল ভাঁড়ের এই গল্পটা আপনারা জানেন। রাজা বললেন, শীতের রাতে কেউ কি সারা রাত এই পুকুরে গলাপানিতে ডুবে থাকতে পারবে? যদি কেউ পারে, আমি তাকে অনেক টাকাপয়সা, ধনরত্ন পুরস্কার দেব। এক ছিল গরিব দুঃখী মানুষ। সে বলল, আমি পারব। সে মাঘ মাসের তীব্র শীতে সারা রাত পুকুরের পানিতে গলা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ভোরের বেলা সে উঠল পানি থেকে। রাজার কাছে গিয়ে সে বলল , আমি সারা রাত পুকুরের পানিতে ছিলাম। আপনার সান্ত্রী -সেপাই সাক্ষী। এবার আমার পুরস্কার দিন। রাজা বললেন , সেকি, তুমি কেমন করে এটা পারলে! গরিব লোকটা বলল, আমি পানিতে সারা রাত দাঁড়িয়ে রইলাম। দূরে , অনেক দূরে এক গৃহস্থবাড়িতে আলো জ্বলছে। আমি সেই দিকে তাকিয়ে রইলাম। সারা রাত কেটে গেল। মন্ত্রী বলল , পাওয়া গেছে। এই যে দূরের প্রদীপের আলোর দিকে ও তাকিয়ে ছিল , ওই প্রদীপ থেকে তাপ এসে তার গায়ে লেগেছে। তাই তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে এই শীতেও ওই পুকুরে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে থাকা। রাজা বললেন , তাই তো! তাহলে তো তুমি আর পুরস্কার পাও না। যাও। বিদায় হও। গরিব লোকটা কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিল। সে গেল গোপাল ভাঁড়ের কাছে। অনুযোগ জানাল তাঁর কাছে। সব শুনলেন গোপাল ভাঁড়। তারপর গোপাল ভাঁড় বললেন, ঠিক আছে, তুমি ন্যায়বিচার পাবে। গোপাল ভাঁড় দাওয়াত করলেন রাজাকে। দুপুরে খাওয়াবেন। রাজা এলেন গোপাল ভাঁড়ের বাড়ি। গোপাল ভাঁড় বললেন , আসুন আসুন। আর সামান্যই আছে রান্নার বাকি। কী রাঁধছি দেখবেন , চলেন। গোপাল ভাঁড় রাজাকে নিয়ে গেলেন বাড়ির পেছনে। সেখানে একটা তালগাছের ওপর একটা হাঁড়ি বাঁধা আর নিচে একটা কুপিবাতি জ্বালানো। গোপাল ভাঁড় বললেন , ওই যে হাঁড়ি, ওটাতে পানি, চাল, ডাল, নুন সব দেওয়া আছে। এই তো খিচুড়ি হয়ে এল বলে। শিগগিরই আপনাদের গরম গরম খিচুড়ি খাওয়াচ্ছি। রাজা বললেন , তোমার বাড়িতে দাওয়াত খাব বলে সকাল থেকে তেমন কিছু খাইনি। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। এখন এই রসিকতা ভালো লাগে ! রসিকতা কেন, রান্না হয়ে এল বলে। রাজা বললেন, তোমার ওই খিচুড়ি জীবনেও হবে না, আমার আর খাওয়াও হবে না। চলো মন্ত্রী, ফিরে যাই। গোপাল বললেন, মহারাজ, কেন খিচুড়ি হবে না। দূরে গৃহস্থবাড়িতে জ্বালানো প্রদীপের আলো যদি পুকুরের পানিতে ডুবে থাকা গরিব প্রজার গায়ে তাপ দিতে পারে , এই প্রদীপ তো হাঁড়ির অনেক কাছে। নিশ্চয়ই খিচুড়ি হবে। রাজা তার ভুল বুঝতে পারলেন। বললেন, আচ্ছা পাঠিয়ে দিয়ো তোমার ওই গরিব প্রজাকে। ওর প্রতি আসলেই অন্যায় করা হয়েছে। ওকে ডাবল পুরস্কার দেব। সে তো আপনি দেবেনই। আমি জানতাম। আসুন , ঘরে আসুন। দুপুরের খাওয়া প্রস্তুত। তারপর রাজা সত্যি সত্যি গরিব লোকটাকে অনেক পুরস্কার দিয়েছিলেন।


ভূতের উপদ্রব

রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারে রাজবৈদ্য নিয়োগ দেওয়া হবে। দেশদেশান্তর থেকে চিকিত্সকেরা এলেন যোগ দিতে। গোপালকে রাজা দায়িত্ব দিলেন চিকিত্সক নির্বাচনের। গোপাল খুশিমনে বসলেন তাঁদের মেধা পরীক্ষায়। —আপনার চিকিত্সালয়ের আশপাশে ভূতের উপদ্রব আছে? —জি আছে। প্রচুর ভূত। ওদের অত্যাচারে ঠিকমতো চিকিত্সা পর্যন্ত করতে পারি না। দিন দিন ওদের সংখ্যা বাড়ছেই। এবার দ্বিতীয় চিকিত্সকের পালা। —আপনার চিকিত্সালয়ের আশপাশে ভূতের উপদ্রব কেমন? —আশ্চর্য, আপনি জানলেন কীভাবে! ওদের জ্বালায় আমি অস্থির। দিন দিন ওদের সংখ্যা বাড়ছেই। এভাবে দেখা গেল সবার চিকিত্সালয়ের আশপাশেই ভূতের উপদ্রব আছে। একজনকে শুধু পাওয়া গেল , যাঁর কোনো ভূতসংক্রান্ত ঝামেলা নেই। গোপাল তাঁকে রাজবৈদ্য নিয়োগ দিলেন। পরে দেখা গেল এই চিকিত্সকই সেরা। রাজাও খুশি। একদিন রাজা ধরলেন গোপালকে। গোপাল বললেন , ‘আজ্ঞে মহারাজ, দেখুন, সবার চিকিত্সাকেন্দ্রের আশপাশে ভূতের উপদ্রব শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। এর অর্থ হলো , তাঁদের রোগী মরে আর ভূতের সংখ্যা বাড়ে…আর যাঁকে নিলাম, তাঁর ওখানে কোনো ভূতের উপদ্রব নেই…অর্থাত্ তাঁর রোগীএকজনও মরে না।


বলদের মতো চারটা পা

গোপালের তখন বয়স হয়েছে। চোখে ভালো দেখতে পারে না। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বললেন , কী গোপাল, গতকাল আসনি কেন? —আজ্ঞে চোখে সমস্যা হয়েছে। সবকিছু দুটো দেখি। কাল এসেছিলাম। এসে দেখি দুটো দরবার। কোনটায় ঢুকব, ভাবতে ভাবতেই। —এ তো তোমার জন্য ভালোই হলো। তুমি বড়লোক হয়ে গেলে। আগে দেখতে তোমার একটা বলদ , এখন দেখবে দুটো বলদ। —ঠিকই বলেছেন মহারাজ। আগে দেখতাম আপনার দুটো পা, এখন দেখছি চারটা পা, ঠিক আমার বলদের মতোই…


গাধা তামাক খায় না

গোপালের তামাকপ্রীতি রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মোটেই পছন্দ করতেন না। একদিন গোপালকে সঙ্গে নিয়ে পালকিতে কোথাও যাচ্ছেন , দেখেন তামাক ক্ষেতে এক গাধা চড়ে বেড়াচ্ছে। সেই গাধা ক্ষেতের আগাছা খাচ্ছে ঠিকই , কিন্তু তামাক পাতায় ভুলেও মুখ দিচ্ছে না। সুযোগ পেয়ে রাজা বলেন, ‘দেখেছো হে গোপাল, একটা গাধাও তামাক খায় না!’ শুনে গোপাল বলে, “আজ্ঞে রাজা মশাই, তা যা বলেছেন। কেবল গাধারাই তামাক খায় না।”


মাছি সব মিষ্টি খেয়ে ফেলছে

মিষ্টির দোকানের পাশ দিয়ে যাবার সময় থরে থরে সাজানো মিষ্টি দেখে গোপালের খুব লোভ হয়েছে। কিন্তু ট্যাকে নেই একটি পয়সাও। ভেতরে গোপাল ঢুকে দেখে ময়রার ছোট ছেলেটি বসে আছে। গোপাল শুধায় , ‘কি-রে, তোর বাপ কই?’ ‘পেছনে। বিশ্রাম নিচ্ছে।’ ‘তোর বাপ আমি আমি খুব বন্ধু বুঝলি? আমার নাম মাছি। ক’টা মিষ্টি খাই? তোর বাপ কিচ্ছু মনে করবে না।’ বলেই গোপাল টপাটপ মিষ্টি মুখে পুরতে শুরু করেছে। মিষ্টি নিমিষে শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে ছেলে চেঁচিয়ে বলে বলে , ‘বাবা, মাছি কিন্তু সব মিষ্টি খেয়ে ফেলছে!’ শুনে পেছন থেকে ময়রা বলে, ‘আরে খেতে দে! মাছি আর কট্টুকু খাবে?’


মন্দিরে কুকুর নিয়ে ঢুকছো

মন্দিরে ঢুকতে যাবার সময় পেছন থেকে পন্ডিতের বাঁধা , ‘এ তুমি কী করছো গোপাল! মন্দিরে কুকুর নিয়ে ঢুকছো?’ ‘কোথায় কুকুর?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে গোপাল। ‘এই তো তোমার পেছনে!’ একটি কুকুরের দিকে হাত তুলে দেখায় পন্ডিত। ‘এটি আমার কুকুর নয়!’ ‘তোমার নয় বললেই হলো?’ রাগ দেখিয়ে বলে পন্ডিত , ‘তোমার পেছন পেছনেই তো যাচ্ছে!’ ‘বটে ? তা তুমিও তো আমার পেছন পেছন আসছো!’


রাম নাম জপলে ভূত ছাড়ে

বেড়াতে বেরিয়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার গোপালের হাত চেপে ধরে আস্তে আস্তে মোচড়াতে লাগলেন। গোপাল : আমার হাত নির্দোষ, ওকে রেহাই দিন। রাজা : জোর করে ছাড়িয়ে নাও। গোপাল: সেটা বেয়াদবি হবে। রাজা: উহু, তাহলে হাত ছাড়ব না। গোপাল তখন যে রোগের যে দাওয়াই বলে রাম নাম জপতে থাকলেন। রাজা : এতে কি আর কাজ হবে? দাওয়াই কোথায়? গোপাল: রাম নাম জপাই তো মোক্ষম দাওয়াই। রাজা : মানে? গোপাল: পিতামহ, প্রপিতামহের আমল থেকে শুনে আসছি, রাম নাম জপলে ভূত ছাড়ে। রাজা গোপালের হাত ছেড়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গে।


গোপাল ভাঁড়ের ভাইপো আর তার স্ত্রীর ঝগড়া

গোপাল ভাঁড়ের ভাইপো আর তার স্ত্রীর মধ্যে ভীষণ ঝগড়া বেধেছে। মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে গেলেন গোপাল। বললেন, ‘বলি কী নিয়ে এত ঝগড়া হচ্ছে শুনি?’

গোপালের ভাইপো বলল, ‘দেখুন তো কাকা, আমি আগামী বছর একটা দুধেল গাই কিনব বলেছি। আর আমার স্ত্রী বলছে, সে নাকি গাইয়ের দুধ দিয়ে পায়েস রাঁধবে।’ ভাইপোর স্ত্রীও সমান তেজে চেঁচিয়ে উঠল।

দু হাত তুলে দুজনকে থামতে ইঙ্গিত করে বললেন গোপাল, ‘আস্তে আস্তে! গাধা নাকি তোরা?’
দুজন একটু ঠান্ডা হলে গোপাল ভাইপোকে বললেন, ‘আরে গাধা, তোর বউয়ের পায়েস রাঁধা তো পরের কথা। আমি যে বাড়ির পেছনে সবজির বাগান করেছি, সেসব যে তোর গরু খাবে, সে খেয়াল আছে?


গোপাল এর দাওয়াত

গোপাল খেতে খুব পছন্দ করত। তো একবার বাড়ি ফেরার পথে দেখে এক বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে। খাওয়া দাওয়ার আয়োজন চলছে মন্দ না। গোপাল চট করে সেখানে ঢুকে পাত পেতে বসে পড়ল। খেতে শুরু করল। এমন সময় বিয়ে বাড়িত লোকজন খেয়াল করল এ লোকটা তো অচেনা। এ তো দাওয়াতি নয়! এ কোথ্থেকে এল? তখন একজন তাকে চেপে ধরল –
– এই দাদা, আপনি তো আমাদের দাওয়াতি নন, খেতে বসলেন যে বড়?

গোপাল ভাঁড়কে বিন্দুমাত্র বিচলিত মনে হল না। সে দিব্যি খেতেই থাকল। এবং খেতে খেতেই উত্তর দিল –

– দেখুন, আপনারা আমাকে দাওয়াত না দিয়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিতে পারেন। কিন্তু আপনাদের পড়শি হিসেবে আমি তো আর দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিতে পারি না। কী বলেন, তাই নিজেই চলে এসেছি!

বলে গোপাল ভাঁড় ঠিক মনোযোগ দিয়ে দিব্যি খেতে শুরু করল। তখন উত্তর শুনে সবাই চমৎকৃত! উল্টো তখন সবাই তাকে তোষামোদ করে খাওয়াতে লাগল।


গোপালের দোতলা বাড়ি

গোপালের দোতলা বাড়ি তৈরি হলে সে তার প্রতিবেশী এক ভাইপোকে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগলো, “রাখাল, ও রাখাল, কী করছিস ওখানে?” রাখাল বুঝলো, কাকা দোতলা বাড়ি দেখাচ্ছে। তাই সে কোন কথা বলল না। এর বহুদিন পর রাখালও নিজের চেষ্টায় ছোটখাট একটা দোতলা বাড়ি তৈরি করল। তারপর ছাদে উঠে ডাকতে লাগল, “কাকা কাকা, সে বছর আমায় ডেকেছিলে কেন?


পেটুক গোপাল

এক দিন গোপাল ও মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র সহ সভা সদরের লোকেরা বসে আখ খাচ্ছে। মহারাজ আখ খেয়া সব আঠি গোপাল এর সামনে জড়ো করছে। তার দেখা দেখি সভাসদের সবাই গোপালের সামনে জড়ো করছে। তখন এক সময় গোপালের সামনে দেখতে দেখতে এক ঝুরি আঠি জমা হলো।

তখন মহারাজ বলল কি হে গোপাল, খিদে কি অনেক পেল নাকি তা না হলে ৫ ঝুড়ি আখ খেলে কিভাবে? তা না হলে ১ ঝুড়ি আঠি হয় না। বলি পেটুক হলে নাকি?

গোপাল ভাঁড় বলল আমি তো আখ খেয়াছি এবং আঠিও ফেলেছি। কিন্তু আপনারা যে আখ খেয়েছেন তাতো আটি সুদ্ধ খেয়ে ফেলেছেন। না হলে আটি গেলো কই। তাই বলুন কে বেশি পেটুক।

No comments