জাপানে অচেনা দেশ থেকে আসা আগন্তুক



রহস্যময় ঘটনাটি জাপানের একটি বিমান বন্দরের। এই ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৫৪ সালে। জাপানের এয়ারপোর্টে তখন সময় দুপুর প্রায় ১২.৩০। জাপানের টোকিও বিমানবন্দরে, হেনেডা নামক বিমান ল্যান্ড করে। বিমানের প্রত্যেক যাত্রী চেকআউটের জন্য কাউন্টারে চলে যায়। সেখানকার সব যাত্রীদের প্রয়োজনীয় নথীগুলি চেক করা হচ্ছিল।

হঠাৎই সেখানকার আধীকারিকেরা আবিষ্কার করেন যে, একজন যাত্রীর, পাসপোর্টে লিখা আছে যে, সেই ব্যাক্তিটি “টরেড” নামের এক দেশ থেকে এসেছেন। আধিকারিকেরা এর আগে কোনোদিনও এরকম দেশের নাম শুনেননি।

দেশটির নাম শোনার পরেই, তাদের লোকটির উপর সন্দেহ হয়। এরপর এই যাত্রীকে সুরক্ষা আধিকারিকদের হাঁতে দিয়ে দেওয়া হয়। সেই ব্যক্তিটিকে জাপানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান যে, তিনি একজন ব্যবসায়ী, এবং ব্যবসার জন্যই এখানে এসেছেন। এরপর আধিকারিকেরা সেই ব্যক্তির পাসপোর্ট চেক করেন এবং দেশের নাম “টরেড” দেখে অবাক হয়ে যান, কারণ এর আগে এরকম কোনো দেশের নাম তারা শোনেননি। সত্যি কি এরকম নামের কোনো দেশ পৃথিবীতে আছে? এরপর সেই রহস্যময় ব্যক্তিটি জানান যে, এই পাসপোর্টের মাধ্যমে তিনি ইউরোপের বেশ কিছু দেশে ইতিমধ্যে ভ্রমণ করে ফেলেছেন, কিন্তু এরকম ভাবে কোথাও কোনো অসুবিধা হয়নি।

এরপর আধিকারিকেরা সেই মানুষটির পাসপোর্টে দেখেন যে, সেখানে অন্য দেশগুলির যে সিলমোহর ছিল, সেগুলি একদম আসল। কিন্তু এত কিছু দেখার পড়েও, আধিকারিকেরা এটা মানতে নারাজ ছিল যে, আদতেও এরকম নামের কোনো দেশ পৃথিবীতে আছে কি? এরপর আধিকারিকেরা সেই যাত্রীটিকে পৃথিবীর মানচিত্র দেখান এবং জিজ্ঞাসা করেন যে, “টরেড” দেশটি আসলে কোথায়?

এরপর সেই যাত্রীটি দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ মহাদেশের একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র অ্যান্ডোরা নামের একটি দেশকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। এরপর সেই ব্যক্তিটি জানায়, সে বুঝতে পারছেনা তার দেশ “টরেড” এর জায়গায় “অ্যান্ডোরা” কেন লেখা আছে! আধিকারিকরা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেননা যে, এই ব্যক্তিটি এরকম কাল্পনিক দেশের নাম কেন বলছেন, আবার তার কাছে যতসব নথিপত্র, পাসপোর্ট, ভিসা ছিল সবগুলিতে তার দেশের নাম “টরেড” লিখা আছে।

টরেড পাসপোর্ট

এরপর আধিকারিকেরা তাকে প্রশ্ন করে, সে এখানে কার সাথে দেখা করতে এসেছে। জবাবে সেই ব্যক্তিটি জাপানের একটি কোম্পানির নাম জানায় এবং যে হোটেলে তিনি রুম বুকিং করেছিলেন, সেটিও জানান। এরপর আধিকারিকেরা সেই কোম্পানি এবং হোটেলে যোগাযোগ করেন, এবং জানতে পাড়েন যে, এরকম কোনো ব্যক্তির ব্যবসার জন্য তাদের সঙ্গে দেখা করার কথা নেই। হোটেলটি জানায় এরকম কোনো ব্যক্তি তাদের কাছে রুম বুক করেনি।

এরপর সেই আধিকারিদের সন্দেহ হয় এবং তারা ভাবেন যে, এই মানুষটি হয়ত কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছে এবং সে নিজের পরিচয় গোপন রেখে কোনো কাজ হাসিল করতে চাইছে। তাই সেই মানুষটিকে একটি ঘড়ে বন্দী করে রাখা হয় এবং পুলিশি পাহারার মধ্যে তাকে রাখা হয়। পরের দিন, যখন সেই বন্দী মানুষটির ঘড়ের দরজা খোলা হয়, তখন সেখানে উপস্থিত সবাই থমকে যান, কারণ মানুষটি রাতের মধ্যেই ভ্যানিশ হয়ে গেছে। কিন্তু এত কঠোর পাহারার মধ্য দিয়ে পালানো সম্ভব নয়, আর রুমটির জানালাগুলিও আগে থেকেই সিল করা ছিল, তাই সেগুলি দিয়ে পালানোর কোনো প্রশ্নই উঠে না।

এরপর আধিকারিকেরা আরও অবাক হন যখন তারা দেখেন যে, সেই রহস্যময় মানুষটির প্রয়োজনীয় সব নথিপত্রও রাতের মধ্যেই ভ্যানিশ হয়ে গেছে। কেউই কিছুই বুঝতে পারছিলেন না যে, এত কিছু ঘটনা কিভাবে ঘটে গেল?

এরপর সেই ব্যক্তিটির খোঁজ আর কোথাও পাওয়া যায় নি। ইন্টারনেটে এই বিষয়ে অনেক মানুষই অনেক কথা বলেছেন। কারও মতে- “এই রহস্যময় ব্যক্তিটি অন্য গ্রহ থেকে এসেছে। সে টাইম মেশিন দিয়ে এখানে এসেছে। যখন যে দেখল যে, সে বিপদে পড়ে যাচ্ছে তখন সে হঠাৎই বেপাত্তা হয়ে যায়।“ কিন্তু এত পাহারার মধ্যে সেই মানুষটি কিভাবে পালিয়ে গেল, এবং প্রয়োজনীয় নথীগুলি সে কিভাবে নিল, সেই প্রসঙ্গে কোনো উত্তর আজও পাওয়া যায়নি।

No comments