পৃথিবীর এক অমীমাংসীত রহস্য ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল’


প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে। নিজেকে সে আগলে রাখে নানা ধরনের রহস্য দিয়ে। কিছু রহস্যের সমাধান মানুষ করতে পারে। কিছু রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায়।

এমন এক অমীমাংসীত রহস্যে নাম হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল।

এটি শয়তানের ত্রিভূজ বা“ Devil’s Triangle “নামে পরিচিত ।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিড, পুয়ের্তো রিকো, বারমুডা এ তিনটি স্থানে কাল্পনিক ত্রিভুজাকার এলাকা কে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বলে।
বহু জাহাজ ও বিমান এ জায়গায় গেলে নিখোঁজ হয়ে যায় যার কারণে একে “ Devil’s Triangle ” বলে।

ধারণা করা হয় এই অঞ্চলে কিছু অতিপ্রাকৃত জিনিস রয়েছে যার কারণে এখানে পৌঁছানো বিমান ও জাহাজ নিখোঁজ হয়ে যায়।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে যত সব মিথ আর গল্প :

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে কত যে মিথ আর গল্প আছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যেমন, এই এলাকায় কখনো কোনো জাহাজ বা বিমান গেলে তা আর কখনো ফিরে আসেনি, ওখানে গেলেই জাহাজ আর বিমান নাকি ওদের সিগন্যাল হারিয়ে ফেলে,আর বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে কম্পাসের কাঁটা এলোমেলো দিক দেখায়,অদ্ভুত সব আলোর নাচানাচি দেখা যায়, আর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস তো চলতেই থাকে। এরকম আরো কত গল্প যে আছে ! লোকমুখে প্রচলিত আছে, বারমুন্ডা ট্রায়াংগেলে লুকিয়ে আছে শয়তানের আস্তানা। আবার কেউ কেউ বলে, এসবের জন্য দায়ী অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর উপস্থিতি। অনেকের মতে দাজ্জালের দ্বীপ নাকি এটাই, আবার কেউ কেউ বলে এই পানির তলদেশে লুকিয়ে আছে হারানো আটলান্টিস শহর। এসব মিথকে আরো অতিরঞ্জিত করেছে বিভিন্ন লেখকের বই, যেখানে অনেক কারণ সহ প্রমাণ করার চেষ্টাও করা হয়েছে যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কোন স্বাভাবিক স্থান নয়।

১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে প্রকাশিত অনেকগুলো বইয়ের মধ্যে অলৌকিক ঘটনা ঘটার পেছনে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে যেমন:

১। বিমান ও জাহাজ গুলো মহাজাগতিক আক্রমণের শিকার হয় এবং কথাও বলা হয় যেহেতু কম্পাস দিক ঠিকমত কাজ করেনা তার মানে বারমুডার কোথাও শক্তিশালী চৌম্বক আছে যার প্রবল আকর্ষণ এ দুর্ঘটনা ঘটে।

২। কেউ কেউ আবার এ জায়গার মধ্যে ওয়াল ঘড়ির অস্তিত্ব আছে বলে মনে করেন যা জাহাজ ও বিমান গুলো কে টেনে নিয়ে যায়।

ইসলাম কি বলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে :

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিতে দুটি ধারণা প্রচলিত আছে।

১। এখানে মসিহ-উদ-দজ্জ্বাল এর বাসস্থান,
২। এটি খারাপ জ্বীনেদের বাসস্থান।
৩। শয়তানের অবস্থান

১/ পৃথিবীর অনাবিষ্কৃত স্থানসমূহের মধ্যে বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল একটি। দাজ্জ্বালের সম্পর্কে হযরত তামিম দারির যে ঘটনাটি রয়েছে সেটার সাথে আমরা বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল কে তুলনা করেন তিনি সমূদ্রে হারিয়ে গিয়েছিলেন এবং একটি অচেনা দ্বিপে এসে পৌঁছেছিলেন, হতে পারে বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল-ই সে দ্বীপ। যদিয়ও আরব থেকে অনেক দূরে এটি অবস্থিত ।

২/ আবার বারমুডা হয়তো কোনো খারাপ জ্বীনেদের বাসস্থান যারা শয়তানকে মেনে চলে, এজন্য সেখানে কোনো জাহাজ বা প্লেন প্রবেশ করলে তার চিহ্নটুকুও থাকেনা।

বিজ্ঞান এ বিষয়ে মিথেন বুদবুদ (Methane Bubbles) এর যে থিওরি দিয়েছে তা যদি সত্যি হতো তাহলে আর যাই হোক উড়ন্ত প্লেন আর জাহাজ এভাবে উধাও হয়ে যাওয়া অসম্ভব, তাই এ থিওরি মানা কষ্টকর।

তবে যাই হোক এটা আল্লাহর একটা রহস্যময় সৃষ্টি, আমরা শুধু ধারণাই করতে পারি, কিন্তু কেউই নিশ্চিত বলতে পারবোনা যে বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল আসলে কি? কে আছে সেখানে

৩/ মেশকাতের ৭১ নাম্বার হাদিস উল্লেখ রয়েছে, নিশ্চয় শয়তানের অবস্থান হল সমুদ্রের মাঝে । (মুসলিম / মেশকাত )

১৯৭৫ সালে এক গবেষক কয়েক বছরের সংবাদ পত্র ঘেটে এবং বারমুডা কে ঘিরে সব ঘটনা অনুসন্ধান করে “The Barmuda Triangle Mistery Solved ” নামে একটি বই লেখেন।

এ বইতে তিনি প্রমাণ করে দেখান যে বারমুডার নামে যত রহস্য ও তত্ত বর্ণনা করা হয়েছে তার বেশিরভাগই অতিরঞ্জিত সন্দেহমূলক এছাড়া পত্র পত্রিকায় যেসব জাহাজ ও বিমান নিখোঁজ বলা হয়েছে সেগুলোর ঘটনা পরবর্তী তে পাওয়া গেলেও গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। অনেক দূর্ঘটনা এই এলাকার আশে পাশে হলেও বর্ণনার সময় এগুলোকে বারমুডার ভিতরের ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল এটলেনটিক মহাসাগরে বিষুবীয় এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ার কারনে ভৌগোলিক ভাবেই এখানে নিয়মিত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এসব ঝড়ের সাথে দূর্ঘটনার তুলনা করলে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত বলে মনে হবে।

এছাড়া কম্পাসের ভুল দেক নির্ণয়ের ব্যাপারটি হলো পৃথিবীর ভৌগোলিক মেরু ও চৌম্বকীয় মেরুরপার্থক্য থাকার কারণে বিভিন্ন স্থানে কম্পাসের বিশেষ ভিন্নতা দেখা দেয়। বারমুডা য় অবস্থান কালেও ভৌগোলিক মেরু ও চৌম্বকীয় মেরুরপার্থক্য থাকার কারণে কম্পাস সঠিক দিক নির্দেশ করতে পারে না।

বারমুডার রহস্যময়তার সুযোগে কিছু কিছু কোম্পানি তাদের পুরোন জাহাজ ডুবিয়ে বিমা কোম্পানির কাছ থেকে টাকা আদায় করত বলে অভিযোগ আছে।

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল এর ওপর লেখা বিভিন্ন বই ও টিভি শো গুলো বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে অনেক টাকা উপার্জন করত।

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল সমপর্কে সব কিছুই ধারনা করা। কোনোটাই পুরোপুরি সত্য না। বিজ্ঞান একদিন এর সব তথ্য জানবে। সব রহস্য উদঘাটন করবে যার বেশি দিন বাকি নেই।

No comments