ভাল থাকতে জীবন থেকে দূর করুন সকল আক্ষেপ


আজকে আপনি যে অবস্থায় আছেন সেখানে আসার পেছনে কাজ করছে আপনার অনেক ছোট-বড় নানা সিদ্ধান্ত। তেমনই আজ আপনি যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন তার ওপর নির্ভর করছে আপনার ভবিষ্যৎ। সেই ভবিষ্যৎটা শান্তির হতে পারে, আক্ষেপেরও হতে পারে। কিন্তু আমরা তো আক্ষেপ নিয়ে বাঁচতে চাই না।

তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
কীভাবে আমরা রক্ষা পেতে পারি আক্ষেপের হাত থেকে?
এমনই কিছু বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করব।

আক্ষেপ কাকে বলে?
ধরুন, আপনি আজ রাতের ট্রেনে আপনার বন্ধুর বিয়ের দাওয়াতে যাবেন। আপনি বাসা থেকে ঠিক এক ঘণ্টা সময় নিয়ে বের হলেন স্টেশনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকায় আপনি সময়মতো স্টেশনে পৌঁছাতে পারলেন না। ট্রেনটি আপনাকে রেখেই যাত্রা শুরু করে দিল। সেই সময়ে নিশ্চয়ই আপনার মনে হবে আর ৩০ মিনিট আগে বাসা থেকে বের হলে আপনি আপনার বন্ধুর বিয়েটা মিস করতেন না? এই অনুভূতিটার নামই আক্ষেপ।

বলা হয়ে থাকে মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় মৃত্যু নয়, আক্ষেপ নিয়ে মৃত্যু। আক্ষেপ ধীরে ধীরে রূপ নিতে পারে বিষণ্ণতায়ও। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে এই আক্ষেপ থেকে দূরে থাকা যাবে?

নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন
আমরা সবাই ভুল করি। কিন্তু খুব কম মানুষই সেই ভুলগুলোকে ভুলে যেতে পারি। ভুল করা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তার জন্য দিনের পর দিন নিজেকে দোষারোপ করতে থাকা স্বাভাবিক না। যতই আপনি আপনার অপরাধবোধগুলো বয়ে বেড়াবেন, আপনার আক্ষেপ ততই বাড়বে। তাই নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন। লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিন এবং নিজেকে বলুন, “আমি আমার সব ভুলের জন্য নিজেকে ক্ষমা করলাম।

কেউই নিখুঁত না
‘ভুল’ মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। ভুলই আমাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে, নতুন জিনিস শিখতে সাহায্য করে। ভুলই আমাদেরকে নতুন এবং আরও ভালো ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করে। নিজের উন্নতি করার চেষ্টা করা আর নিজেকে নিখুঁত বানানোর চেষ্টা করা দুটো ভিন্ন জিনিস। কোনো মানুষই নিখুঁত হতে পারে না। আপনি যাকে নিজের আদর্শ মনে করেন তিনিও অনেক trial & error-এর মধ্যে দিয়েই আজকের জায়গায় এসেছেন। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত প্রতিদিন শুধুমাত্র গতকালের চেয়ে ভালো, উন্নত একজন মানুষ হয়ে ওঠা। নিখুঁত হওয়ার আশা করলে পদে পদে আক্ষেপ এসে আপনাকে জেঁকে ধরবে।

ভুল থেকে শিক্ষা নিন
নিজেকে ক্ষমা করার পরের পদক্ষেপটি হচ্ছে ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া। নিজেকে প্রশ্ন করুন এই অভিজ্ঞতাটি থেকে আপনি কী শিখেছেন? এই অভিজ্ঞতাটি আপনাকে কী বলতে চাইছে? আপনার কি কোনো কাজ আরও বেশি বেশি করা উচিত? নাকি কোনো কাজ করা কমিয়ে ফেলা উচিত? কী করলে আপনি এই ভুলটি আবারও করবেন না? জীবনের কঠিনতম অভিজ্ঞতাগুলো সবসময়ই আমাদের কিছু না কিছু শেখায়। যদি আপনি একটি অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিখতে পারেন এবং সেই শিক্ষাকে পরের অভিজ্ঞতায় কাজে লাগাতে পারেন তাহলে সেটাই আপনার কারণে পরিণত হবে। তাহলেই আপনি আক্ষেপবিহীন জীবনযাপন করতে পারবেন।

নিজের স্বপ্নকে কখনো ভুলে যাবেন না
“স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।”
–এ পি জে আব্দুল কালাম

একটি হাসপাতালে ১০০ জন বৃদ্ধ মানুষের ওপর করা একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় তাঁদের প্রায় সবার জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ কোনো ভুল কাজ করা নয়, বরং কোনো বিশেষ কিছু না করতে পারা, কোনো স্বপ্ন, কোনো আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেষ্টা না করা। জীবন মানে শুধু সারা সপ্তাহ একঘেয়ে কাজ, একটি ক্লান্ত শুক্রবার এবং নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য সেই বিশেষ ‘কোনো একদিন’ এর অপেক্ষা করা নয়। সুখী হতে চাইলে আপনাকে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে। আর সেই চেষ্টার শুরুটা যেন হয় আজই। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে থাকলে সেই সঠিক সময় কখনোই আসবে না।

আক্ষেপ নিয়ে আক্ষেপ করা ছেড়ে দিন
বার বার আপনাকে আক্ষেপ করতে নিষেধ করা মানেই এটা নয় যে আক্ষেপ থাকা কোনো অন্যায়। বরং ভুল করার মতোই সেই ভুল নিয়ে আফসোস করাও আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আমাদের মস্তিষ্কের বিশেষ একটি অংশের কাজই হচ্ছে আমাদের মাঝে অপরাধবোধ তৈরি করা। যাকে আমরা ‘অবৈজ্ঞানিক‘ ভাষায় বিবেক বলে থাকি। আর বিজ্ঞানীদের ভাষায় মস্তিষ্কের কর্টেক্সের সমস্যার কারণে কিছু মানুষ প্রচণ্ড ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তা নিয়ে আক্ষেপ অনুভব করে না। একজন স্বাভাবিক সুখী মানুষের মত জীবনযাপন করতে চাইলে আপনাকে পুরোপুরি আক্ষেপ ছাড়া বাঁচতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

কিন্তু আপনাকে আক্ষেপ কাটিয়ে উঠে বাঁচা শিখতে হবে। সীমিত সময়ের আফসোসকে সারা জীবনের আক্ষেপে পরিণত হতে না দিয়ে এগিয়ে যান। একটি নতুন দিন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

No comments