জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) একটি শিক্ষামূলক ঘটনা!

জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) একটি শিক্ষামূলক ঘটনা!

একদিন জুনায়েদ বাগদাদী (রহঃ) রাতের অন্ধকারে ঘরের এক কোণায় বসে ইবাদত করছিলেন। এমন সময় তিনি খেয়াল করলেন সিঁধ কাটার শব্দ। সিঁধ কেটে ঘরে চোর ঢুকেছে। অন্ধকারে ঘরের কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু জুনায়েদ বাগদাদী ঠিকই চোরের কাজকর্ম দেখতে পাচ্ছিলেন। চোর হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে সারা ঘর তন্নতন্ন করেও তেমন কিছুই পেল না নেয়ার মতো। তাই নিরাশ হয়ে খালি হাতে ফেরত যাচ্ছিল।

হযরত জুনায়েদ সব দেখছিলেন কোণায় বসে। তার মায়া হলো যে, শীতের রাতে এভাবে লোকটি কষ্ট করে ঘরে ঢুকল কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। চোর যখন সিঁধের কাছাকাছি তখন জুনায়েদ বললেন, এই দাঁড়াও। লোকটি চমকে ওঠে পেছনে তাকাল। চোর তাড়াহুড়ো করে পালাতে পারবে না ভেবে দাঁড়িয়ে রইল।

জুনায়েদ কাছে এসে বললেন, খালি হাতে ফেরত যাচ্ছ কেন?

চোর বিষ্মিত হলো এবং বলল, নেয়ার মতো কিছুই খুঁজে পাই নি।

জুনায়েদ বললেন, তুমি দাঁড়াও। আমি খুঁজে দিচ্ছি। এই বলে তিনি ভেতরে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর মাটির একটা পাত্র এনে বললেন, এটাই নিয়ে যাও।

চোর বলল, এটা দিয়ে আমি কি করব?

জুনায়েদ বললেন, আমি যা করি তুমি তা-ই করবে।

চোর বলল, আপনি কি করেন?

জুনায়েদ বললেন, আমি ওযু করি।

লোকটি বলল, আমি ওযু করতে পারি না।

জুনায়েদ বললেন, এসো! আমি শিখিয়ে দেই। ওযু শেখার পর সে বলল, ওযু করে আমি কি করব?

জুনায়েদ বললেন, আমি যা করি তুমিও তাই করবে।

লোকটি তখন বলল, আমি তো নামাজ পড়া জানি না।

জুনায়েদ বললেন, এসো! আমি নামাজ শিখিয়ে দেই।

তিনি জায়নামাজে দাঁড়িয়ে লোকটিকে পাশে দাঁড় করালেন এবং নামাজ শেখালেন।

এরপর দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! তাকে জায়নামাজে দাঁড় করিয়েছি। আমার এইটুকুই ক্ষমতা ছিল। আমার ক্ষমতা এখানেই শেষ। তার মনের ওপর আমার কোনো ক্ষমতা নেই। কিন্তু তোমার ক্ষমতার শেষ নেই। তুমি তার মনকে পরিশুদ্ধ করো। পাপ কাজ থেকে বিরত রেখো।

দোয়া শেষ হবার পর লোকটি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠল। সারাজীবন অনেক ভুল হয়ে গেছে। পবিত্র জীবনের জন্যে অনুশোচনা বোধ এবং স্রষ্টার কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা অনেক প্রয়োজন। লোকটি কাঁদতে কাঁদতে একসময় প্রশান্ত হলো। এবং অনুভব করল স্রষ্টা তাকে ক্ষমা করেছেন।

বিশাল বড় ভুল করে ক্ষমা লাভের জন্যে সাত সমুদ্র পানির দরকার নেই। বরং স্রষ্টার কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা এবং চোখের কয়েক ফোঁটা পানিই যথেষ্ট।

No comments