বাগান মালিক ও তার সন্তানদের ঘটনা


ইয়েমেনের কোন এক প্রদেশের একটি বাগানের মালিক ছিলেন একজন আল্লাহভীরু লোক। তিনি নিয়মিত বাগানের ফসলের নির্দিষ্ট একটি অংশ গরিব-মিসকিনগদের মাঝে দান করতেন।

তার মৃত্যুর পর তার তিন পুত্র তার সমম্পদের মালিক হলো। তারা ভাবল যে,আমাদের লোকসংখ্যা অনেক। আমাদের পরিবার-পরিজনের তুলনায় বাগানের ফসল ও সম্পদ খুবই সীমিত।

সুতরাং গরিব-মিসকিনদের মাঝে ফসলের নির্দিষ্ট একটি অংশ দান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব পর নয়; কিন্তু ঐ বাগান মালিকের এক ছেলে এই চিন্তার বিপরীত ছিলেন। তিনি গরিব-মিসকিনের প্রতি ছিলেন তার পিতার মতই সহানুভূতিশীল। সে তার ভাইদেরকে তাদের চিন্তা থেকে ফিরে আসতে বলে। তবে তার কথায় অন্যান্যরা কান দিল না। তারা প্রতিজ্ঞা করল যে,আগামী দিন সকালবেলা আমরা ভিক্ষুকদল আসবার পূর্বেই গিয়ে ফসল কেটে আনবো; কিন্তু এ শপথ ও প্রতিজ্ঞায় আল্লাহর ইচ্ছাকে শমিল করল না। অর্থাৎ,তারা এ কথা বলল না যে,আল্লাহ চাইলে [ইনশাআল্লাহ] আমরা আগামীকাল সকাল বেলা গিয়ে ফসল কেটে আনবো।

এভাবে ইনশাআল্লাহ বলে আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা না করা এবং গরিব-মিসকিনদের সম্পদের অংশ না দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের অপরাধে তাদের ঘুমে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাদের বাগানের উপর গজব নজিল করলেন। ফলে প্রচন্ড মরুঝড় বাগানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাগানের ফসলকে মথিত করে সম্পূর্ণরূপে বিনাশ ও ধ্বংশ করে ফেলল।

বাগানটি দেখলে মনে হতো যে,মথিত হয়ে চর্বিত ফসলের ন্যায় হয়ে গেছে। অতঃপর অতি প্রত্যুষে তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে,তোমরা ফসল কাটতে চাইলে সকাল সকাল বাগনে চলো। ভিক্ষুকের দল ভিড় জমাবার পূর্বেই ফসল তুলে আনতে হবে। অতঃপর তারা পূর্ব সিদ্ধান্তমাফিক খুব দাম্ভিকতা ও অহংকারী মনে সকালবেলা ফসল কাটার জন্য রওয়ানা হলো। আর পরস্পর চুপে চুপে বলাবলি করতে লাগল- সাবধান! আজ যেন কোন প্রকারে তোমাদের কাছে ভিক্ষুকের দল ভিড় জমাতে না পারে। তারা আসার পূর্বেই ফসল তোলার কাজ শেষ করতে হবে।

এভাবেই ভিক্ষুক ও গরিবদেরকে তাড়িয়ে দেওয়ার মনোভাব নিয়ে তারা বাগানে পৌঁছল। বাগানের বিনাশ ও ধ্বংসযজ্ঞ অবলোকন করে তারা বলল- আমরা পথ ভুলে হয়তো অন্য কোনো বাগানে এসেছি। আমাদের বাগানতো এটা নয়। আমাদের বাগান কত সুন্দর,সুজলা-সুফলা শস্যভরা,আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি,কিন্তু বাগানের চতুর্দিকের সীমানা ও আলামত দেখে তারা চেতনা ফিরে পেল। তারা তাদের নিজেদের গর্ব-অহংকার ও আল্লাহর সাথে নাফরমানি করার কথা স্মরণ করতে লাগলো। আর বলল, আমাদের উপর আল্লাহর লানত এসেছে, আমাদেরকে ফসল হতে বঞ্চিত করা হয়েছে।

তখন তাদের মধ্যে যে লোকটি স্বভাব-চরিত্রে উত্তম ছিলেন এবং ভিক্ষুকদের প্রতি সংবেদনশীল ছিলেন, সে বলল, আমি কি পূর্বে তোমাদেরকে আল্লাহর সাথে নাফরমানি না করার জন্য সতর্ক করিনি?? এটা আল্লাহর সাথে নাফরমানি, ভিক্ষুকগণকে বঞ্চিত করার ইচ্ছা এবং গর্ব অহংকারের পরিণতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এখনও সময় রয়েছে,গুনাহ হতে তওবা করো। এখনও কেন আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করছ না? সর্বহারা হওয়ার পরই তাদের বিভ্রান্তির দশা কাটল। তারা তওবা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বলল,‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মহিমা প্রকাশ করছি। আপনিই মহাশক্তিধর। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমরা সীমালঙ্ঘণ করেছি। ক্ষমা না করলে আমাদের আর কোন উপায় নেই।’

অতঃপর তারা পরস্পর দোষারোপ করতে লাগল। পরিশেষে নিজেদের ভাগ্য বিড়ম্বনার জন্য নিজেদেরকেই দোষী সাব্যস্ত করল এবং বলল, এটা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহমূলক আচরণের জন্যই হয়েছে। তারা আল্লাহর নিকট খাঁটি অন্তরে তওবা করে আশা করল যে, আল্লাহ মহান ও অতিশয় দয়ালু। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি যে, তিনি নিজগুণে আমাদের ক্ষমা করে এ বাগানের পরিবর্তে উত্তম বাগান আমাদেরকে দান করতে পারেন। আমরা আমাদের যাবতীয় সমস্যা তাঁর নিকট অর্পণ করলাম এবং তাঁর দিকেই মনোনিবেশ করলাম।

মুফাসসিরগণ লিখেছেন- তাদের এই তওবার ফলে এবং নিজেদের যাবতীয় সমস্যা আল্লাহর নিকট সোপর্দকরণ এবং সত্যদীনের ধারক হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা এটার তুলনায় অনেক অনেক গুণ উত্তম ও সুজলা-সুফলা শস্যভরা উদ্যান দান করে তাদের অপূর্ব সম্পদশালী করেছিলেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“নিশ্চয় আমি এদেরকে পরীক্ষা করেছি, যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে। যখন তারা কসম করেছিল যে, অবশ্যই তারা সকাল বেলা বাগানের ফল আহরণ করবে।” আর তখন তারা ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেনি। অতঃপর তোমার রবের পক্ষ থেকে এক দুর্যোগ বাগানের ওপর দিয়ে বয়ে করে গেল,আর তারা ছিল ঘুমন্ত। ফলে তা পুড়ে কালো কালো ছাইয়ে পরিণত হলো।
সূরা ক্বালাম ১৭-৩১


No comments